বিশ্বাস মানুষের মনের ব্যাপার। যার বিশ্বাস হয় সে বিশ্বাস করে, যার বিশ্বাস হয় না তাকে জোর করলেও তার মধ্যে বিশ্বাস আসে না। আর মুসলিম পরিবারে জন্ম নিলে কেউ জিজ্ঞেসও করে না, তুমি কোন ধর্মটি বেছে নিবে? মানে, মতামত না দিয়েই, নিজে দেখেশুনে বুঝে পছন্দ করার বয়সে পৌঁছাবার আগেই একজন মানুষ মুসলমান হয়ে যায়। কিন্তু পরে যদি তারা ইসলাম ত্যাগ করতে চায়? সে যদি অন্য কোন ধর্ম বেছে নিতে চায়? বা সে যদি নাস্তিক হয়ে যায়? ইসলাম ধর্মে ধর্ম ত্যাগের শাস্তি কী? এই বিষয়ে শরীয়তের বিধান কী? আসুন নিচের হাদিসগুলো থেকে জেনে নিই [1] [2] –
সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৩৩/ শাস্তির বিধান
৪৩০০. আহমদ ইব্ন মুহাম্মদ (রহঃ) — ইকরাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আলী (রাঃ) ঐ সব লোকদের আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন, যারা মুরতাদ হয়েছিল। এ সংবাদ ইব্ন আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট পৌছলে, তিনি বলেনঃ যদি আমি তখন সেখানে উপস্থিত থাকতাম, তবে আমি তাদের আগুনে জ্বালাতে দিতাম না। কেননা, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোময়া আল্লাহ্ প্রদত্ত শাস্তির (বস্তু) দ্বারা কাউকে শাস্তি দেবে না। অবশ্য আমি তাদেরকে আল্লাহ্র রাসূলের নির্দেশ মত হত্যা করতাম। কেননা, তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি কেউ দীন পরিত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে যায়, তবে তোমরা তাকে হত্যা করবে। আলী (রাঃ) ইব্ন আব্বাস (রাঃ)-এর এ নির্দেশ শুনে বলেনঃ ওয়াহ্! ওয়াহ্! ইব্ন আব্বাস (রাঃ) সত্য বলেহছেন। আর ইহাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৩৩/ শাস্তির বিধান
৪৩০১. আমর ইব্ন আওন (রহঃ) —- আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঐ মুসলমানের রক্ত হালাল নয়, যে এরূপ সাক্ষ্য দেয় যে, “আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহ্র রাসূল”। তবে তিনটি কারণের কোন মুসলমানের রক্ত প্রবাহিত করা হালালঃ (১) যদি কোন বিবাহিত ব্যক্তি যিনা করে; (২) যদি কেউ কাউকে হত্যা করে, তবে এর বিনিময়ে হত্যা এবং (৩) যে ব্যক্তি দীন ত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে মুসলমানের জামায়াত থেকে বেরিয়ে যায়।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
আসুন, সহি বুখারী গ্রন্থ থেকে সরাসরি হাদিসগুলো যাচাই করে নিই [3] [4] –
এবারে আসুন দেখি, প্রখ্যাত হাদিস প্রনেতা ইমাম মালিকের মুয়াত্তা ইমাম মালিক গ্রন্থ থেকে মুরতাদের শাস্তি কী হতে পারে তা জেনে নিই। ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশ হওয়া মুয়াত্তা ইমাম মালিক দ্বিতীয় খণ্ডের ৪০৬, ৪০৭ নম্বর পৃষ্ঠায় হাদিসটি পাবেন- ডাউনলোড লিঙ্ক [5] –
সেইসাথে, আরো অমানবিক ব্যাপার হলো, মুরতাদকে কেউ হত্যা করলে তার জন্য হত্যাকারীর ওপর মৃত্যুদণ্ড প্রয়োগ হবে না। বিষয়টি সন্নিবেশিত আছে বিধিবদ্ধ ইসলামিক আইন খণ্ড ১ এ [6] –
একই সাথে, মুরতাদের বিষয় সম্পত্তিও জবরদখল করা হবে, তেমনটিই বলা আছে ইসলামিক আইনে [7] –
আরো দেখি ফয়যুল হাদী শরহে তিরমিযী (ছানী) গ্রন্থ থেকে [8] –
মুরতাদের শাস্তিঃ ‘ইরতিদাদ’ অর্থ কোনো মুসলমান ইসলাম ধর্ম থেকে বের হয়ে যাওয়া। ইসলাম ধর্ম যে ত্যাগ করে তাকে মুরতাদ’ বলে। আল্লামা আবুল হাসান আলী নদভী রহ. বলেনঃ “ইসলামের পরিভাষায় ইরতিদাদ অর্থ হলো, ইসলাম ধর্মের স্থানে অন্য ধর্ম, ইসলামী আকীদার স্থানে অন্য আকীদা গ্রহণ করা। রাসূলুল্লাহ সা যে শিক্ষা নিয়ে আগমন করেছিলেন, যা কিছু তথা অকাট্য সত্যরূপে বর্ণনা পরম্পরায় আমাদের পর্যন্ত পৌঁছেছে এবং যা কিছু ইসলামে নিশ্চিতরূপে প্রমাণিত তাকে অস্বীকার করা’। যেমন ইসলাম ত্যাগ করে খৃষ্টধর্ম কিংবা কাদিয়ানী মতবাদ গ্রহণ করা অথবা নামায-রোজা, হজ্ব ইসলামের দণ্ডবিধি ইত্যাদিকে অস্বীকার করা। কুরআন মজীদে স্পষ্টভাবে ঘোষিত হয়েছে- فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُم ثُمَّ يَجِدُوا فِى أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
মুরতাদের শাস্তিঃ ইমাম কুদুরী বলেন ঃ إِذَا ارْتَدَّ الْمُسْلِمُ عَنِ الْإِسْلَامِ عُرِضَ عَلَيْهِ الْإِسْلَامُ فَإِن كَانَتْ لَهُ شُبْهَةٌ كُشِفَ لَهُ وَيُحْبَسَ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ فَإِن أَسْلَمَ وَالإقتل . অর্থাৎ মুসলমান যদি ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে যায় তাহলে তার সামনে ইসলাম পেশ করা হবে । যদি তার মনে সন্দেহ থাকে তাহলে তার সন্দেহ দূর করা হবে। তাকে তিন দিন আটকে রাখা হবে। যদি সে ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে তো ভালো, অন্যাথায় তাকে হত্যা করা হবে। মুরতাদ পুরুষ হলে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, এটা সকল ইমামের অভিমত। আর যদি মুরতাদ মহিলা হয় তাহলে এ ব্যাপারে কিছুটা মতভেদ আছে। ইমাম শাফেঈ রহ. বলেন, মুরতাদ নারীকেও হত্যা করতে হবে। কারণ, ইরতিদাদ সম্পর্কে হাদীসের মূল ভাষ্য হলো- অর্থাৎ ‘যে ধর্ম ত্যাগ করেছে, তাকে হত্যা কর।’ এত নারী পুরুষের প্রার্থক্য করা হয়নি। পক্ষান্তরে আহনাফের অভিমত হলো কোন মহিলাকে ধর্ম ত্যাগের অপরাধে হত্যা করা বৈধ নয়। কারণ হাদীসে এসেছে- অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ নারীদের হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। অনুরূপভাবে বুখারী শরীফের হাদীসে এসেছে, “যদি কোনো নারী ধর্ম ত্যাগ করে তবে তাকে ইসলামের দিকে আহবান করাবে। যদি সে ফিরে আসে তবে তাকে গ্রহণ করবে । যদি অস্বীকার করে তাকে বন্দী করে রাখবে।
এবারে আসুন ইযাহুল মুসলিম গ্রন্থ থেকে এই বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ পড়ি [9] –
ইদানিংকালে জাকির নায়েক সহ অনেক দাইয়ী দাবী করেন যে, আমভাবে মুরতাদদের কতল করার বিধান ইসলামে নেই, বরঞ্চ শুধুমাত্র বিদ্রোহী মুরতাদদের হত্যা করতে নির্দেশ দিয়েছে। অথচ হাদিসের ব্যাখ্যাগ্রন্থগুলো পরিষ্কারভাবেই বলা আছে যে, এইসব দাবী একেবারেই মিথ্যা। মুরতাদক সে বিদ্রোহী হোক কিংবা না হোক, তাকে হত্যা করতে হবে [10] –
শুধু তাই নয়, মুরতাদের স্ত্রী এবং পরিবারের সদস্যদের সাথে ইসলামি শরীয়তে কী করা হবে, সেটি জেনে নিই, [11]
প্রখ্যাত ইসলামিক আলেম মাহমুদুল হাসান গুনভীর একটি বক্তব্য শুনে নিই,
তথ্যসূত্র
- সূনান আবু দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) হাদিস নম্বরঃ ৪৩০০ [↑]
- সূনান আবু দাউদ ( ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নম্বরঃ ৪৩০১ [↑]
- সহিহ বুখারী খণ্ড ৫ পৃষ্ঠা ২৩৬ [↑]
- সহিহ বুখারী খণ্ড ১০ পৃষ্ঠা ২৬১ [↑]
- মুয়াত্তা ইমাম মালিক, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪০৬, ৪০৭ [↑]
- বিধিবদ্ধ ইসলামিক আইন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৫৭ [↑]
- বিধিবদ্ধ ইসলামিক আইন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৪৬ [↑]
- ফয়যুল হাদী শরহে তিরমিযী (ছানী), প্রথম খণ্ড, আল কাউসার প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ৪১৫ [↑]
- ইযাহুল মুসলিম, মুসলিম জিলদে সানীর অদ্বিতীয় বাংলা শরাহ, দারুল উলুম লাইব্রেরি, পৃষ্ঠা ৪০৩-৪০৭ [↑]
- দরসে তিরমিযী, আল্লামা মুফতি তাকী উসমানী, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩২৬ [↑]
- তাফসীরে মাযহারী, হাকিমাবাদ খানকায়ে মোজাদ্দেদিয়া প্রকাশনী, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩০০ [↑]