13.যেই বালককে মুহাম্মদ ভয় পেতো

Print Friendly, PDF & Email

প্রথমে আসুন একটি হাদিস পড়ি, [1] [2]

সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫৫/ ফিতনা সমূহ ও কিয়ামতের নিদর্শনাবলী
পরিচ্ছেদঃ ১৭. ইবন সায়্যাদের আলোচনা
৭০৯০। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু হারামালা ইবনু ইমরান আত-তুজীবী (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) একদল মানুষ সহ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ইবনু সায়্যাদের নিকট গেলেন। তখন তাকে বনী মাগলার কিল্লার নিকট একদল বালকের সাথে ক্রীড়ারত অবস্থায় পেলেন। তখন ইবনু সায়্যাদ বালিগ হবার কাছাকাছি পৌছে গিয়েছিল। কিন্তু সে তা জানত না। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাত দ্বারা তার পৃষ্ঠে আঘাত করে বললেন, তুমি কি সাক্ষ্য দিচ্ছ যে, আমি আল্লাহর রাসুল? এ কথা শুনে ইবনু সায়্যাদ তার প্রতি তাকাল এবং বলল যে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি উম্মীদের রাসূল। অতঃপর ইবনু সায়্যাদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করল যে, আপনি কি সাক্ষ্য দেন যে, আমি আল্লাহর রাসুল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ছেড়ে দিলেন এবং (এর সরাসরি উত্তর না দিয়ে) বললেন আমি ঈমান আনয়ন করেছি আল্লাহর প্রতি ও তার রাসুলগণের প্রতি।
এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তুমি কি দেখতে পাও? ইবনু সায়্যাদ বলল, আমার নিকট সত্যবাদী ও মিথ্যাবদী লোক আসে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তোমার বিষয়টি সঠিক-বেঠিক মিশ্রিত (হযবরল) হযে গিয়েছে। তোমাকে জিজ্ঞেস করার জন্য একটি কথা আমি মনে মনে গোপন রেখেছি। ইবনু সায়্যাদ বলল, তা হচ্ছে دخ (ধুয়া)। তৎপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ দূর হয়ে যা। তুই তোর পরিধি অতিক্রম করতে পারবি না। অতঃপর উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে ছেড়ে দিন। আমি এক্ষণি তার গর্দান উড়িয়ে দেই। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যদি সে দাজ্জাল হয়, তবে তো তাকে হত্যা করতে সক্ষম হবে না। আর যদি সে দাজ্জাল না হয় তবে তাকে হত্যা করার মাঝে কোন কল্যাণ নেই।
সালাম ইবন আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, পরবর্তী সময়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং উবায় ইবনু কাব (রাঃ) সেই খেজুর বাগানের দিকে চললেন, যেখানে ইবনু সায়্যাদ বসবাস করত। বাগানের মধ্যে এসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃক্ষের আড়ালে আত্মগোপন করতে চেষ্টা করছিলেন, যাতে ইবনু সায়্যাদ তাঁকে দেখার পূর্বে তিনি তার কথা শুনে নেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখলেন যে, সে তার বিছানায় একটি চাঁদরে আবৃত অবস্থায় গুনগুন করে কি যেন বলছিল। এদিকে ইবনু সায়্যাদের মা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দেখল যে, তিনি বৃক্ষের আড়ালে আত্নগোপনের চেষ্টা করছেন। সে ততক্ষণাৎ ইবনু সায়্যাদকে বলে উঠলঃ হে সাফ! এটা ইবনু সায়্যাদের নাম। মুহাম্মাদ এসে গেছে। (এ কথা শুনতেই) ইবনু সায়্যাদ বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তার মা তাকে সাবধান না করলে সে পরিষ্কার বলে ফেলত।
সালিম (রহঃ) বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বলেছেন, এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদের উদ্দেশ্যে একটি বক্তৃতা দিলেন। তাতে আল্লাহ তা’আলার যথাযোগ্য প্রশংসা ও গুনকীর্তনের পর দাজ্জালের কথা উল্লেখ করলেন এবং বললেনঃ আমি তোমাদেরকে দাজ্জালের ফিৎনা সম্পর্কে সতর্ক করছি যেমন প্রত্যেক নবী তাঁর সম্প্রদায়কে এ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। এমনকি নূহ (আলাইহিস সালাম) ও তাঁর কাওমকে এ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। তবে এ সম্পর্কে আমি তোমাদেরকে একটি বিষয় পরিস্কারভাবে বলে দিচ্ছি যা কোন নবী তার সম্প্রদায়কে বলেননি। তা হল এই যে, তোমরা জেনে রাখ, দাজ্জাল কানা হরে। আল্লাহ তাআলা কানা নন।
ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জনৈক সাহাবী তাকে অবহিত করেছেন যে, যে দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাজ্জাল সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। সে দিন তিনি বলেছেন, যে তাঁর চক্ষুদ্বয়ের মাঝখানে কাফির (كافر) অথবা (ك ف ر) লেখা থাকবে। যে ব্যক্তি তার কার্যক্রম অপছন্দ করবে সে তা পাঠ করতে পারবে অথবা প্রত্যেক মুমিন ব্যক্তই তা পাঠ করতে সক্ষম হবে। তিনি এও বলেছেন যে, তোমরা জেনে রাখ যে, তোমাদের কোন ব্যক্তি মৃত্যুর পূর্বে তার প্রতিপালককে দেখতে সক্ষম হবে না।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ)

এবারে আসুন এই হাদিসটি আরেকটি হাদিস গ্রন্থ থেকে পড়ি, [3] [4]

সুনান আত তিরমিজী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৩৬/ ফিতনা
পরিচ্ছেদঃ ইবন সায়্যাদ প্রসঙ্গে বর্ণনা।
২২৫২. ’আবদ ইবন হুমায়দ (রহঃ) ….. ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, সাহাবীগণের এক দলসহ একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবন সাইয়াদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। এই দলে উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুও ছিলেন। বানূ মাগালায় উচুমহলের পাশে ইবন সায়্যাদ তখন কিছু বালকের সাথে খেলছিল। সেও ছিল একজন বালক। সে টের পাওয়ার আগেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গিয়ে তার পিঠে হাত-চাপড় দিলেন। পরে বললেনঃ তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে, আমি আল্লাহর রাসূল?
ইবন সায়্যাদ তাঁর দিকে তাকিয়ে বললঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি উম্মীদের রাসূল।

আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেনঃ এরপর ইবন সায়্যাদ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললঃ আপনি কি সাক্ষ্য দেন যে, আমি আল্লাহর রাসূল?
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি তো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের উপর ঈমান এনেছি।
তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ কি আসে তোমার কাছে?
ইবন সায়্যাদ বললঃ আমার কাছে সত্যও আসে মিথ্যাও আসে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ বিষয়টি তোমার কাছে মিশ্রিত হয়ে গেছে।
এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি তোমার জন্য একটি বিষয় ধ্যানে লুকিয়ে রাখলাম বল তো কি? তিনি(‏يَوْمَ تَأْتِي السَّمَاءُ بِدُخَانٍ مُبِينٍ)‏ আয়াতটি গোপনে পাঠ করেছিলেন।
ইবন সায়্যাদ বললঃ তা হল ’’দুখ’’
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ দূর হ, তুই কখনো তোর তাকদীর অতিক্রম করতে পারবি না।

উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ, অনুমতি দিন, আমি এর গর্দান উড়িয়ে দিই।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সে যদি সত্যই (দাজ্জাল) হয়ে থাকে তবে তো তার উপর তোমার ক্ষমতা হবে না। আর যদি (দাজ্জাল) না হয়ে থাকে তবে একে হত্যা করা তো তোমার জন্য কল্যাণকর নয়।
রাবী আবদুর রাজ্জাক (রহঃ) বলেন, শব্দটিতে দাজ্জালকে বুঝানো হয়েছে। আদাবুল মুফরাদ, বুখারি, মুসলিম, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ২২৪৯ [আল মাদানী প্রকাশনী]
(আবু ঈসা বলেন) এ হাদীসটি হাসান-সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ)

2

এবারে আসুন আরও একটি হাদিস পড়ি, [5]

সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫৫/ ফিতনা সমূহ ও কিয়ামতের নিদর্শনাবলী
পরিচ্ছেদঃ ১৭. ইবন সায়্যাদের আলোচনা
৭০৮০। উসমান ইবনু আবূ শায়বা ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) … আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদিন আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিলাম। এ সময় আমরা কতিপয় বালকের নিকট দিয়ে গেলাম। তাদের মধ্যে ইবনু সায়্যাদও বিদ্যমান ছিল। বালকেরা পালিয়ে গেল এবং ইবনু সায়্যাদ বসে রইল। এ দেথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুটা বিরক্তিবোধ করলেন। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেনঃ তোমার দুই হাত ধুলায় ধুসরিত হোক। তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে, আমি আল্লাহর রাসুল! সে বলল, না। বরং আপনি কি সাক্ষ্য দেন যে আমি আল্লাহর রাসুল। একথা শুনে উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে ছেড়ে দিন। আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি যা মনে করছো, যদি সে সে-ই হয়, তবে তো তুমি তাকে হত্যা করতে সক্ষম হবে না।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ‌ ইব্‌ন মাসউদ (রাঃ)

এই একই বালক নবী মুহাম্মদের সাহাবীদের একদম নাকানি চুবানি খাইয়ে ছেড়ে দিতো বলে হাদিস থেকে জানা যায় [6]

সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫৫/ ফিতনা সমূহ ও কিয়ামতের নিদর্শনাবলী
পরিচ্ছেদঃ ১৭. ইবন সায়্যাদের আলোচনা
৭০৮৪। উবায়দুল্লাহ ইবনু উমার আল কাওয়ারীরী ও মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) … আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (মক্কা যাওয়ার পথে) ইবনু সায়্যাদ মক্কা পর্যন্ত আমার সফর সঙ্গী ছিল। পথিমধ্যে সে আমায় বলল, মানুষের কানাঘুষায় আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। তারা মনে করছে, আমিই দাজ্জাল। আপনি কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেননি যে, দাজ্জালের কোন সন্তান হবে না? তিনি বলেন, আমি বললাম, হ্যাঁ শুনেছি। তখন সে বলল, আমার তো সন্তানাদি রয়েছে। আপনি কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেননি যে, দাজ্জাল মক্কা ও মদীনা প্রবেশ করতে পারবে না? আমি বললাম, হ্যাঁ, শুনেছি। সে বলল, দেখুন, আমি তো মদীনায় জন্ম গ্রহণ করেছি এবং এখন মক্কা যাবার ইচ্ছা করছি। এ সব কথা বলার পর উপসংহারে সে বলল, আল্লাহর কসম! তবে আমি জানি, দাজ্জাল কোথায় জন্মগ্রহণ করেছে, তার বাড়ী কোথায় এবং এখন সে কোথায় আছে। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, (এহেন কথা বলে) সে আমাকে মহা ফাঁপরে ফেলে দিল।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ)

তথ্যসূত্র

  1. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৭০৯০ []
  2. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৪০৭ []
  3. সুনান আত তিরমিজী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ২২৫২ []
  4. সুনান আত তিরমিজী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৬৫ []
  5. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৭০৮০ []
  6. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৭০৮৪ []
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন