অনেক সময় কোন একটি জিনিস বা বিষয়ের কোন একটি অংশের জন্য কোন তথ্য সত্য হলেও, সামগ্রিক বিষয়টির জন্য সেটি সত্য নাও হতে পারে। Aristotle তাঁর Sophistical Refutations গ্রন্থে এই বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন। যেমন ধরুন, পানি আমাদের ভিজিয়ে দেয়, সেটি আমরা পান করি। পানি হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন দ্বারা গঠিত। তার মানে কিন্তু এই নয় যে, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনও আমাদের ভিজিয়ে দিতে পারে বা হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনও আমরা পান করতে পারবো। বরঞ্চ, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন দ্বারা যেই পদার্থটি গঠিত হয়, সেটি পানি হয়ে থাকলে শুধুমাত্র তখনই সেটি আমাদের ভিজিয়ে দিতে সক্ষম হবে এবং তখনই সেটি পান যোগ্য হবে।
আবার ধরুন, একটি ক্রিকেট টিমে শচীন, ব্রায়ান লারা থেকে শুরু করে পৃথিবীর সব সেরা খেলোয়ারদের নেয়া হলো। প্রত্যেকেই বিশ্বসেরা খেলোয়াড়। কিন্তু দল হিসেবেই সেটি সেরা হবে, এমন কোন কথা নেই। ধরা যাক, সকল সেরা ব্যাটসম্যান দিয়ে যদি দলটি গঠিত হয়, তাহলে বোলিং করার সময় তারা খারাপ বোলিং করবে। ফলাফল হিসেবে তারা হেরে যেতে পারে। আবার, প্রত্যেকের মধ্যে যদি বন্ধুত্বপূর্ব সম্পর্ক না থাকে, তাহলে তারা হেরে যেতে পারে। প্রত্যেকে খুবই ভাল খেলোয়ার হওয়ার পরেও, তাদের দলটি যে বিশ্বসেরা হবে, এমন কিন্তু বলা যায় না। এভাবে অংশ বিশেষের জন্য কিছু তথ্যের সত্যতার ওপর ভিত্তি করে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হচ্ছে ‘ফ্যালাসি অব কম্পোজিশন’।
গাঁথন বা বিভাজনের কুযুক্তির একটি ভাল উদাহরণ মানুষ সম্পর্কে প্রায়শই দেয়া হয়ে থাকে। বলা হয়, মানুষ হাত পা হৃদপিণ্ড কিডনি ফুসফুস এই অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলোর একটি সমন্বয়। এই অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো আলাদা আলাদাভাবে যেহেতু স্বাধিনভাবে চিন্তা করতে অক্ষম, তাই মানুষের পক্ষেও চিন্তা করা বা চেতনাসম্পন্ন হওয়া সম্ভব নয়। বা ধরুন, মানুষ অণু পরমাণুর সম্ন্বয়ে একটি সত্তা। অণু পরমাণুর চেহেতু চিন্তা করার সামর্থ্য নেই, তাই মানুষেরও চিন্তা করার সামর্থ্য থাকার কথা নয়। এই দাবী করে আস্তিক মানুষেরা আসলে ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণের চেষ্টা করেন। কিন্তু একটু লক্ষ্য করলেই বোঝা যায়, এটি গাঁথন বা বিভাজনের কুযুক্তির একটি ধ্রুপদী উদাহরণ। অণু পরমাণুর দ্বারা গঠিত কিছুর বৈশিষ্ট্য যে অণু পরমাণুর মতই হবে, আলাদা কিছু হবে না, এরকম ধারণা খুবই অমূলক। বা ফুসফুস কিডনি মগজ দিয়ে গঠিত হলেই যে মানুষ ঐ অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলোর বৈশিষ্ট্য ধারণ করবে, এমনটিও। যেমন, একটি বই হচ্ছে কিছু কাগজ আর কালির সমন্বয়। তাই বলে যে পৃথিবীর সকল বই মানেই কাগজ আর কালি, এমনটি নয়। বইগুলোতে যা লেখা, তা আলাদা আলাদা অর্থ বহন করে।
![বহুল প্রচলিত কিছু কুযুক্তি বা ফ্যালাসি বা কুতর্ক বা হেত্বাভাস 73 কুযুক্তি বা ফ্যালাসি 72](https://imagedelivery.net/f1WB4tcfMJdoXc_M7eEHYg/www.shongshoy.com/2021/02/Fallacy-of-composition-or-Division.jpg/w=1024)