এই হেত্বাভাসটি সংঘটিত হয় যখন কী স্বাভাবিক, কী স্বাভাবিক নয়, কী হয়ে আসছে, কী কখনও হয় নি, এর উপর ভিত্তি করে যখন কোন নৈতিক সিদ্ধান্ত টানা হয়, কোনটাকে ভাল, কোনটাকে মন্দ বলা হয়। অন্যভাবে বললে, সচরাচর ঘটে কিংবা সচরাচর ঘটে না, সবাই করে কিংবা সবাই করে না, এর ওপর ভিত্তি করে যদি কোন কাজকে নৈতিক/ ভাল বা অনৈতিক/মন্দ কাজ বলে সিদ্ধান্ত টানা হয়, তাহলে তাকে আপিল টু নরমালিটি ফ্যালাসি বলা হবে।
উদাহরণ:
১। ১৪০০ বছর আগে পরাজিত বাহিনীর লোকদের হত্যা করে তাদের স্ত্রী কন্যাদের তুলে এনে গনিমতের মাল নাম দিয়ে তাদের সাথে যৌন সম্পর্ক করাটাই স্বাভাবিক ছিল। তাই এই কাজকে খারাপ বলা যাবে না।
> কিন্তু ১৪০০ বছর আগে কোন কাজ খুবই স্বাভাবিক ছিল, সকলেই করতো, সেই কারণেই তা নৈতিক বা ভাল কাজ বলে গণ্য হতে পারে না।
২। বাঙলাদেশে সব সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিই ঘুষ খায়। তাই ঘুষ খাওয়ায় খারাপ কিছু নেই।
> কিন্তু সকল কর্মকর্তা কর্মচারি ঘুষ খেলেই, দুর্নীতি করলেই দুর্নীতি করা বৈধ বা নৈতিক বা ভাল কাজ বলে গণ্য হতে পারে না।
৩। বাঙলাদেশে তারেক জিয়া দূর্নীতি সৃষ্টি করেন নাই। তার আগেও দূর্নীতি হতো। তারেক জিয়ার আগে আওয়ামী লীগও দুর্নীতি করেছে। দুর্নীতিই বাঙলাদেশের মত দেশে এই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাভাবিক বিষয়। সবাই করে। পুলিশ আমলা কর্মচারী কর্মকর্তা সকলেই। তাহলে তারেক জিয়া করে কী অপরাধ করেছে?
> কিন্তু তারেক জিয়া দুর্নীতি সৃষ্টি করে নি, তার আগেও দুর্নীতি হতো, সকলেই করতো, সেটাই সেই সময়ে স্বাভাবিক ছিল, এগুলো কোনটাই দুর্নীতিকে ন্যায্যতা দান করে না। দুর্নীতি করা, জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ লুট করা খারাপ এবং সকলে করলেও সেটা খারাপই থাকে। সকলেই করতো এই দোহাই দিয়ে কাজটিকে ভাল কাজ বলে প্রমাণ করা যায় না।
৪। হযরত মুহাম্মদ ৬ বছরের আয়শাকে বিয়ে করে ৯ বছরে বৈবাহিক যৌনজীবন শুরু করেন। ঐ সময়ে এটাই ছিল স্বাভাবিক। সকলেই করতো। আওয়্যামে জাহিলিয়াতের যুগেও এটি প্রচলন ছিল। তাই নবী মুহাম্মদ কোন খারাপ কাজ করেন নি।
> কিন্তু ঐ সময়ে সকলে করে থাকলেও, সকলের কাজই খারাপ কাজ বলে গণ্য হবে। সকলে করতো তাই একজনার কোন অসভ্য খারাপ কাজকে ভাল কাজ আমরা বলতে পারি না। সকলে করলেও একটি খারাপ কাজ খারাপ থাকে।
৫। আমি একটু ওবিস। এরকম একটু ওবিস হওয়া যুক্তরাষ্ট্রে নরমাল। সুতরাং আমি ঠিকই আছি।
> যুক্তরাষ্ট্রে একটু ওবিস হওয়া নরমাল হলেও, এটা যে স্বাস্থ্যের জন্য ভাল হবে এমন নয়।
৬। গ্রামে সব নারীরই তো বাল্যবিবাহ হচ্ছে, এটা এখানে একটা নরমাল ব্যাপার, সুতরাং এটায় ক্ষতির কিছু নেই…
> একই কারণে এটি হেত্বাভাস।
৭। এরকম ধর্ষককে ধরে গণপিটুনি দেবার ঘটনা আগে কোনদিন ঘটেছে? এগুলো আমাদের সমাজে খুব একটা নরমাল না। তাই এটা নিয়ে এত উদ্বিগ্ন হবার কিছুই নেই। গণপিটুনি দেয়াটা ঠিকই হয়েছে।
> ধর্ষককে গণপিটুনি দেবার ঘটনাটা আগে কখনও না ঘটলেও, এটি নরমাল না হলেও, এই বিষয়টি যে গুরুত্বপূর্ণ না, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, মব জাস্টিসের সংস্কৃতি ও মানব নৈতিকতায় এর কোন প্রভাব থাকবে না, বা ধর্ষকের প্রতি মব জাস্টিস যে নৈতিক হয়ে যাবে এমন কোন কথা নেই। বরং এরকম ক্রিটিকাল কিছু ইস্যুতে, যেখানে অনেকেই মব জাস্টিসের পক্ষে থাকে, এমন ক্ষেত্রেই এসবের আলোচনা বেশি হওয়া উচিৎ, যুক্তিতর্ক হওয়া উচিৎ কারণ এই ক্রিটিকাল টাইমেই ক্রিটিকাল থিংকিং এর বিকাশ ঘটে।