20.বহুবিবাহকে উৎসাহ দেয়া

Print Friendly, PDF & Email

আজকাল অনেকেই দাবী করেন যে, ইসলামে চার বিবি একত্রে রাখার কথা বলা হলেও, বহুবিবাহকে আল্লাহ এবং নবী নাকি নিরুৎসাহিত করেছেন! অথচ, কোরআন হাদিস সীরাত তাফসীরে বহুবিবাহের বিষয়েই উৎসাহ দেয়া হয়েছে। নবীর সাহাবীদের মধ্যে প্রায় সকলেই অনেকগুলো বিবাহ করেছেন, দাসী রেখেছেন। তাদের জীবনী মুসলিমদের জন্য অনুকরণীয় অনুসরনীয় জীবনাদর্শ। সেগুলো ধীরে ধীরে আমরা পড়বো, জানবো। আপাতত কোরআনের আয়াতগুলো দেখে নিই, [1]

যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, (নারী) ইয়াতীমদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তবে নারীদের মধ্য হতে নিজেদের পছন্দমত দুই-দুই, তিন-তিন ও চার-চার জনকে বিবাহ কর, কিন্তু যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, তোমরা সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে একজনকে কিংবা তোমাদের অধীনস্থ দাসীকে; এটাই হবে অবিচার না করার কাছাকাছি।
— Taisirul Quran
আর যদি তোমরা আশংকা কর যে, ইয়াতীমদের প্রতি সুবিচার করতে পারবেনা তাহলে নারীদের মধ্য হতে তোমাদের পছন্দ মত দু’টি, তিনটি কিংবা চারটিকে বিয়ে করে নাও; কিন্তু যদি তোমরা আশংকা কর যে, তাদের সাথে ন্যায় সঙ্গত আচরণ করতে পারবেনা তাহলে মাত্র একটি অথবা তোমাদের ডান হাত যার অধিকারী (ক্রীতদাসী); এটা আরও উত্তম; এটা অবিচার না করার নিকটবর্তী।
— Sheikh Mujibur Rahman
আর যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, ইয়াতীমদের ব্যাপারে তোমরা ইনসাফ করতে পারবে না, তাহলে তোমরা বিয়ে কর নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভাল লাগে; দু’টি, তিনটি অথবা চারটি। আর যদি ভয় কর যে, তোমরা সমান আচরণ করতে পারবে না, তবে একটি অথবা তোমাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে। এটা অধিকতর নিকটবর্তী যে, তোমরা যুলম করবে না।
— Rawai Al-bayan
আর যদি তোমরা আশংকা কর যে, ইয়াতীম মেয়েদের প্রতি [১] সুবিচার করতে পারবে না [২], তবে বিয়ে করবে নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভালো লাগে, দুই, তিন বা চার [৩]; আর যদি আশংকা কর যে সুবিচার করতে পারবে না [৪] তবে একজনকেই বা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীকেই গ্রহণ কর। এতে পক্ষপাতিত্ব [৫] না করার সম্ভাবনা বেশী।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

একইসাথে দেখুন, আল্লাহ নিজেই বলে দিয়েছেন যে, আল্লাহ একদম নিশ্চিতভাবে বলছে, তোমরা কক্ষনো স্ত্রীদের মধ্যে সমতা করতে পারবে না। প্রশ্ন হচ্ছে, আল্লাহ যদি এটি একদম নিশ্চিতিভাবে জেনেই থাকে, তাহলে ৪ বিয়ের অনুমতি কেন দেবেন? [2]

তোমরা কক্ষনো স্ত্রীদের মধ্যে সমতা রক্ষা করতে পারবে না যদিও প্রবল ইচ্ছে কর, তোমরা একজনের দিকে সম্পূর্ণরূপে ঝুঁকে পড়ো না এবং অন্যকে ঝুলিয়ে রেখ না। যদি তোমরা নিজেদেরকে সংশোধন কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
— Taisirul Quran
তোমরা কখনও স্ত্রীগণের মধ্যে সুবিচার করতে পারবেনা যদিও তোমরা তা কামনা কর, সুতরাং তোমরা কোন একজনের প্রতি সম্পূর্ণরূপে ঝুকে পড়োনা ও অপরজনকে ঝুলন্ত অবস্থায় রেখোনা এবং যদি তোমরা পরস্পর সমঝতায় আসো ও সংযমী হও তাহলে নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়।
— Sheikh Mujibur Rahman
আর তোমরা যতই কামনা কর না কেন তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে সমান আচরণ করতে কখনো পারবে না। সুতরাং তোমরা (একজনের প্রতি) সম্পূর্ণরূপে ঝুঁকে পড়ো না, যার ফলে তোমরা (অপরকে) ঝুলন্তের মত করে রাখবে। আর যদি তোমরা মীমাংসা করে নাও এবং তাকওয়া অবলম্বন কর তবে নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
— Rawai Al-bayan
আর তোমরা যতই ইচ্ছে কর না কেন তোমাদের স্ত্রীদের প্রতি সমান ব্যবহার করতে কখনই পারবে না, তবে তোমরা কোনো একজনের দিকে সম্পূর্ণভাবে ঝুঁকে পড়ো না [১] ও অপরকে ঝুলানো অবস্থায় রেখো না; যদি তোমরা নিজেদেরকে সংশোধন কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর তবে নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

আসুন এবারে হাদিসগুলো দেখে নিই, [3] [4]

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫৪/ বিয়ে-শাদী
পরিচ্ছেদঃ ২৪২৯. বহুবিবাহ
৪৬৯৯। আলী ইবনু হাকাম (রহঃ) … সাঈদ ইবনু জুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, ইবনু আব্বাস (রাঃ) আমাকে বললেন, তুমি শাদী করেছ? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, শাদী কর। কেননা, এই উম্মতের মধ্যে যিনি শ্রেষ্ঠ ব্যাক্তি, তাঁর অধিক সংখ্যক বিবি ছিল।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ সা‘ঈদ ইবনু যুবায়র (রহঃ)

সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
৬৭/ বিয়ে
পরিচ্ছেদঃ ৬৭/৪. বহুবিবাহ
৫০৬৯. সা‘ঈদ ইবনু যুবায়র (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) আমাকে বললেন, তুমি কি বিয়ে করেছ? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, বিয়ে কর। কারণ, এই উম্মাতের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তির অধিক সংখ্যক স্ত্রী ছিল। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৯৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৯৯)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ সা‘ঈদ ইবনু যুবায়র (রহঃ)

এবারে আসুন বাঙলাদেশের এক আলেমের বক্তব্য শুনি,

তবে নবীর মেয়ের বেলায় ভিন্ন নিয়ম 

হযরত মুহাম্মদ নিজে অনেকগুলো বিবাহ করেছেন, দাসীর সাথে সহবত করেছেন। এবং প্রায়শই বিবি দাসী এদের নিয়ে রীতিমত ঝগড়াঝাঁটি হয়ে গেছে, যা সামাল দিতে আল্লাহপাকের হুমকিধামকি সহ আয়াত পর্যন্ত নাজিল করতে হয়েছে। নবী মুহাম্মদ আয়শাকে বেশি ভালবাসতেন যেটি সর্বজনবিদিত। নিজে এতগুলো বিয়ে করলেও, নিজের মেয়ের জামাইকে কিন্তু তিনি আর কোন বিয়ে করতে দেন নি [5] [6]। 

সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫৪/ বিয়ে-শাদী
পরিচ্ছদঃ ২৫৩৩. কন্যার মধ্যে ঈর্ষা সৃষ্টি হওয়া থেকে বাধা প্রদান এবং ইনসাফমূলক কথা
৪৮৫০। কুতায়বা (রহঃ) … মিসওয়ার ইবনু মাখরামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মিম্বরে বসে বলতে শুনেছি যে, বনি হিশাম ইবনু মুগীরা, আলী ইবনু আবূ তালিবের কাছে তাদের মেয়ে শাদী দেবার জন্য আমার কাছে অনুমতি চেয়েছে; কিন্তু আমি অনুমতি দেব না, আমি অনুমতি দেব না, আমি অনুমতি দেব না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আলী ইবনু আবূ তালিব আমার কন্যাকে তালাক দেয় এবং এর পরেই সে তাদের মেয়েকে শাদী করতে পারে। কেননা, ফাতেমা হচ্ছে আমার কলিজার টুকরা এবং সে যা ঘৃণা করে, আমিও তা ঘৃণা করি এবং তাকে যা কষ্ট দেয়, তা আমাকেও কষ্ট দেয়।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

এই বিবাহটি যে আলী নিজেই করতে চেয়েছিলেন, তার প্রমাণ পাওয়া যায় বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ থেকে [7]

2

আরো একটি হাদিস গ্রন্থ থেকে দেখে নিই, এই বিয়ে আলী নিজেই করতে ইচ্ছুক ছিলেন কিনা [8]

আল-লুলু ওয়াল মারজান
৪৪/ সাহাবাগণের মর্যাদা
পরিচ্ছেদঃ ৪৪/১৫. ফাতিমা বিনতু নাবী (ﷺ)-এর মর্যাদা।
১৫৯২. মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবু জেহেলের কন্যাকে ‘আলী (রাঃ) বিবাহের প্রস্তাব দিয়ে পাঠালেন। ফাতিমাহ (রাঃ) এ খবর শুনতে পেয়ে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে এসে বললেন, আপনার গোত্রের লোকজন মনে করে যে, আপনি আপনার মেয়েদের সম্মানে রাগান্বিত হন না। ‘আলী (রাঃ) আবূ জেহেলের কন্যাকে বিবাহ করতে প্রস্তুত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিতে প্রস্তুত হলেন। (মিওয়ার বলেন) তিনি যখন হামদ ও সানা পাঠ করেন, তখন আমি তাকে বলতে শুনেছি যে, আমি আবূল আস ইবনু রাবির নিকট আমার মেয়েকে শাদী দিয়েছিলোম। সে আমার সঙ্গে যা বলেছে সত্যই বলেছে। আর ফাতিমাহ আমার টুকরা; তাঁর কোন কষ্ট হোক তা আমি কখনও পছন্দ করি না। আল্লাহর কসম, আল্লাহর রসূলের মেয়ে এবং আল্লাহর দুশমনের মেয়ে একই লোকের নিকট একত্রিত হতে পারে না। ‘আলী (রাঃ) তাঁর বিবাহের প্রস্তাব উঠিয়ে নিলেন।
সহীহুল বুখারী, পৰ্ব ৬২ : সাহাবাগণের মর্যাদা, অধ্যায় ১৬, হাঃ ৩৭২৯; মুসলিম, পর্ব ৪৪ : সাহাবাগণের মর্যাদা, অধ্যায়, ১৫, হাঃ ২৪৪৯
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ (রাঃ)

উপরের হাদিস পড়ে প্রশ্ন উঠতে পারে, মুহাম্মদ তো শুধুমাত্র আবু জেহেলের মেয়ের সাথে আলীর বিবাহতে বাধা দিয়েছিল। অন্য কোন সময় তো দেয় নি! তাহলে সমস্যা কোথায়? কিন্তু এই নির্দেশের পরে নবী ও ফাতিমার জীবদ্দশায় আলী আর দ্বিতীয় বিবাহ করতে পারেন নি, কারণ নবীর ঐ নির্দেশনা। ফাতিমা জীবিত থাকাকালীন তিনি দাসী দিয়েই কাজ চালিয়েছেন। [9] [10]। ফাতিমা মারা যাওয়ার পরে অবশ্য মনের খায়েস ইচ্ছামত মিটিছিলেন [11]

4
6

তথ্যসূত্র

  1. সূরা নিসা, আয়াত ৩ []
  2. সূরা নিশা, আয়াত ১২৯ []
  3. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪৬৯৯ []
  4. সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, হাদিস নম্বরঃ ৫০৬৯ []
  5. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪৮৫০ []
  6. সহিহ বুখারী খণ্ড ৮ ইসলামিক ফাউন্ডেশন []
  7. বোখারী শরীফ (বাংলা তরজমা ও ব্যাখ্যা), খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ২২৯ []
  8. আল-লুলু ওয়াল মারজান, হাদিস নম্বরঃ ১৫৯২ []
  9. সহীহুল বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৭ []
  10. জামাতাকেও নারী উপহার দিতেন মুহাম্মদ []
  11. আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৮৯ []
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন