10.আয়িশা কেন প্রতিবাদ করেনি?

Print Friendly, PDF & Email

এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমতাবান একজন পুরুষের স্ত্রী বা স্ত্রীগণ তার স্বামীর বিরুদ্ধে কোন নির্যাতন নিপীড়নের অভিযোগ করবে, এরকম সম্ভাবনা সকল সমাজে অত্যন্ত কম, রক্ষণশীল সমাজে আরও কম। এইরকম রক্ষণশীল সমাজে একজন নারী নানাভাবে প্রভাবিত হয়। তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই তার অভিযোগ করার সুযোগ কম থাকে। সেই স্বামীটি যদি ধর্মীয়ভাবেই ক্ষমতাবান হন, তাহলে সেই সম্ভাবনা আসলে শূন্যের কাছাকাছিই চলে যায়। এর পেছনে যেসকল বিষয় ভূমিকা রাখে, সেগুলো হচ্ছে,

  • অদৃশ্য ক্ষমতার উপস্থিতি ও প্রভাবঃ সামাজিকভাবে একজন ক্ষমতাশালী পুরুষের একটি নির্দিষ্ট সমাজে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব থাকে, এবং তার মৃত্যুর পরেও তার প্রভাব রয়ে যায়। একটি সম্পর্কের ভিতরে তা একটি অদৃশ্য ক্ষমতার প্রভাব তৈরি করে, যা সেই মানুষটির স্ত্রীকে মানসিকভাবে দুর্বল করে রাখে। পরিণতির ভীতি, সামাজিক সম্মান ও মর্যাদা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা, আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে যাওয়ার ভয় সেইসব নারীকে কার্যত সেরকম বিপ্লবী হওয়া থেকে বিরত রাখে।
  • সামাজিক চাপ এবং Stigma বা কলঙ্কঃ বিশেষ ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের সাথে জড়িত মানুষদের ক্ষমতার কারণে তৈরি হওয়া এক ধরণের সামাজিক চাপ এই সকল নারীর ওপর বজায় থাকে। ক্ষমতাবান স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আরোপ করা সামাজিক দৃষ্টিতে নেতিবাচক ব্যাপার হিসেবে দেখা হয়, যা নানা ধরণের কটু মন্তব্য থেকে শুরু হয় তবে সেগুলো শুধু কটু মন্তব্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। এটি তাকে স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আরোপ করতে পরোক্ষভাবে বিরত রাখে কারণ সেই নারী তার আত্মমর্যাদার উপরই যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী আর রাখতে পারে না।
  • আর্থিক নির্ভরতাঃ অনেক ক্ষেত্রে, একটি রক্ষণশীল সমাজে একজন নারী আত্মনির্ভরশীল থাকে না, নিজস্ব পড়ালেখা বা ব্যবসাবাণিজ্যের কোন সুযোগ তার হয় না। এই কারণে তার আর্থিকভাবে নির্ভর করতে হয় তার ক্ষমতাবান স্বামীর উপর, অথবা ক্ষমতাবান স্বামীর রেখে যাওয়া অর্থের ওপর, অনেক সময় শুধুমাত্র তার স্বামীর প্রভাবের ওপর। স্বামী মারা গেলেও সেই স্বামীর ক্ষমতার প্রভাব যদি সমাজে অক্ষুণ্ণ থাকে, তাহলে তার বিদ্রোহ তার অর্থনৈতিক স্থায়িত্য ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। অধিকাংশ নারীই এই ঝুঁকি নিতে চান না।
  • সমর্থনের অভাবঃ একজন ক্ষমতাবান স্বামীর সাধারণভাবেই প্রচুর সংখ্যক সমর্থক, মিত্র থাকে এবং আইনি সংস্থাগুলিও সেই ক্ষমতাবান স্বামীর সম্মান অক্ষুণ্ণ রাখতে বদ্ধপরিকর থাকে। সেই ক্ষমতাবান স্বামীর একটি বিস্তৃত নেটওয়ার্ক তৈরি হয়, যেখানে ক্ষমতার চক্র তৈরি হয়। এর ফলে একজন স্ত্রী কোন সমর্থক খুঁজে পান না, যে তাকে বিদ্রোহ করার ক্ষেত্রে তার পাশে থাকবে। এটি সেই স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবোধ তৈরি করতে পারে, সে সমর্থকের অভাব বোধ করতে পারে। এটি তাকে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া থেকে আরও নিরুৎসাহিত করতে পারে।
  • মানসিক দুর্বলতাঃ প্রতিটি মানবীয় সম্পর্কই অত্যন্ত জটিল, এবং আবেগ এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অসংখ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে দেখা যায়, একজন নির্যাতক স্বামী তার স্ত্রীকে প্রচুর নির্যাতন করার পরেও সেই স্ত্রী তার স্বামীর প্রতি এক ধরণের আবেগ অনুভব করে। বিশেষ করে আমাদের দেশের খেটে খাওয়া মানুষদের মধ্যে এরকম উদাহরণ খুবই বেশি। স্বামী প্রতিদিনই মারধোর করে, কিন্তু সেই স্ত্রীর তারপরেও তার স্বামীর প্রতি মানসিক আবেগ বোধ করে। এটি হতে পারে ভালবাসার জন্য, হতে পারে আনুগত্যের জন্য। এটি সেই নারীর পক্ষে তার স্বামীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন করে তোলে।

ইসলামে এই বর্বর শিশুকামকে জায়েজ করতে অনেক মুসলিমই দাবী করেন যে, আয়িশা তো এই সম্পর্কে নবীর বিরুদ্ধে কখনো ধর্ষণের বা অন্য কোন অভিযোগ করেননি। তাহলে নাস্তিকরা কেন অভিযোগ করছে? কিন্তু এই ধরণের বক্তব্য একদমই নিম্নমানের প্রতারণা ভিন্ন কিছু নয়। পৃথিবীতে অনেক অপরাধ ঘটে, যেখানে ভিক্টিমের কোন অভিযোগ পাওয়া যায় না। ভিক্টিমের অভিযোগ পাওয়া না গেলেই অপরাধটি ঘটেনি, এরকম বলা শুধু হাস্যকরই নয়, প্রতারণাও বটে। আমাদের দেশের নানীদাদীদের অনেকেই সারাজীবন স্বামীর দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। স্বামীর মৃত্যুর পরে তারা কেউই স্বামীর নামে অভিযোগ করেননি। পরিবারের সম্মান, বংশের মর্যাদা, নিজের সম্মান, এইসব কিছু বিবেচনা করে বেশিরভাগ নির্যাতিত নারীই কখনো নির্যাতক স্বামীর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করেন না। এর দ্বারা এটি প্রমাণিত হয় না যে, তাদের স্বামীরা খুব ভাল মানুষ ছিলেন বা তাদের ওপর কখনোই নির্যাতন হয়নি। আমাদের দেশের অনেক মাদ্রাসার ছাত্রও শিক্ষকদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হন। কিন্তু মুখ ফুটে সেগুলো তারা বেশিরভাগই বলতে পারেন না। একেই ভবিতব্য বলে জীবন কাটিয়ে দেন। এর মানে তো এই নয় যে, তাদের সাথে কিছু ঘটেনি!

একটি শিশুর যেহেতু সম্মতি দেয়ার বয়সই হয়নি, তাই তার সাথে যেকোন যৌন আচরণই ধর্ষণের অন্তর্ভূক্ত। সেটি সেই বাচ্চাটি অভিযোগ করুক কিংবা না করুক। আমরা যদি এটি প্রমাণ করতে পারি যে, তার সাথে এরকম আচরণ ঘটেছিল, তাহলে তার অভিযোগ করা না করা মূল্যহীন। তার ওপর তার স্বামী যদি খুবই প্রভাবশালী ব্যক্তি হয়, তার সম্পর্কে তার স্ত্রী অভিযোগ করবে, এটি ভাবাই যায় না। আমাদের নিজেদের এলাকাতেই এক মস্তবড় রাজনৈতিক নেতা এক মেয়েকে বাসা থেকে তুলে এনে জোর করে বিয়ে করেছিল। বিয়ের প্রথম কয়েকমাস মেয়েটি দুঃখে ছিল। ধীরে ধীরে সে সব মেনে নিতে শুরু করে এবং কয়েকবছর পরে সে তার স্বামীকে ভালবাসতেও শুরু করে। কিন্তু তার মানে তো এই নয়, তাকে জোর করে তুলে এনে বিয়ে করার কাজটি নৈতিক কাজে পরিণত হলো!

পৃথিবীতে এমন অনেক পিতামাতাই আছেন, যারা সামান্য টাকার লোভে কিংবা কোন সুবিধা আদায়ের জন্য নিজের সন্তানকে বিক্রি করে দিতে কার্পণ্য বোধ করেন না। এলাকার ক্ষমতাবান লোকের কাছে মেয়ে বিয়ে দেয়া গ্রামাঞ্চলে এখনো খুব প্রচলিত বিষয়। প্রায় প্রতিদিনই এরকম অসংখ্য খবর আমরা সংবাদপত্রে পড়ি। অনেক পীরের ভক্তকেও দেখা যায়, পীর সাহেবের সাথে নিজের মেয়ের বিয়ে দেন। জান্নাতের লোভে, কিংবা পৃথিবীতে কোন কোন লাভের জন্য। তাই ভবিষ্যতে খলিফা হওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে আবু বকর যদি আয়িশার সাথে নবীর বিয়ে দিয়ে থাকেন, তাতে খুব অবাক হওয়ার কিছু নেই। আয়িশার সাথে মুহাম্মদের এই বিবাহ দেয়ার ঘটনায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হচ্ছে আয়িশা এবং আবু বকরের সম্পর্ক। আমাদের সেগুলোও বিবেচনা করে দেখতে হবে। আসুন মিজানুর রহমান আজহারীর একটি ওয়াজ শুনে নেয়া যাক, যেই ওয়াজ থেকে আবুবকরের সাথে আয়িশার সম্পর্কের বিষয়ে ধারণা পাওয়া যায়,

মুমিনদের কাছ থেকে প্রশ্ন আসতে পারে, আয়িশা বড় হওয়ার পরে তাহলে কেন মুহাম্মদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলো না! এটিও একটি নিম্নমানের প্রতারণা। কারণ ইসলামের শরিয়তের বিধান অনুসারে, নবী মুহাম্মদের যেকোন সমালোচনাকারী শাতিমে রাসুল [1] হিসেবে গণ্য এবং সে মৃত্যুদণ্ডের উপযুক্ত ব্যক্তি। আয়িশা যদি সাহস করে নবীর সম্পর্কে অভিযোগ করতোও, তাহলে তাকে কী আর জীবিত থাকতে দেয়া হতো? আয়িশা কী এটি জানতেন না যে, নবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে তার ফলাফল কী হতে পারে? সেই সময়ে খলিফা কারা ছিলেন? তার পিতা আবু বকর, উমর, উসমান আলী, এরা। এরা সকলেই ছিল নবীর খুবই ঘনিষ্ঠ এবং নবীর নামেই তাদের সাম্রাজ্য বিস্তার এবং খিলাফতের প্রধান হওয়ার সুযোগ হয়েছে। তারা কী এরকম কথা সহ্য করতো? যার নামে তাদের খিলাফত, রাজত্ব এবং ক্ষমতা, তার সম্পর্কে কী স্বাধীনভাবে কেউ অভিযোগ করতে পারতো? আসুন দেখি, আবু বকরের আমলে আবু বকরের বক্তব্য অনুসারে নবীকে মন্দ বলার শাস্তি কী! [2] [3]

সূনান নাসাঈ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৩৮/ হত্যা অবৈধ হওয়া
পরিচ্ছেদঃ ১৬. রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে মন্দ বলার শাস্তি
৪০৭২. আমর ইবন আলী (রহঃ) … আবু বারযা আসালামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ)-কে মন্দ বললে, আমি বললামঃ আমি কি তাকে হত্যা করবো? তিনি আমাকে ধমক দিয়ে বললেনঃ এই মর্যাদা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত আর কারো নেই।
তাহক্বীকঃ সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ বারযাহ (রাঃ)

হযরত আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেন-
“ যে ব্যক্তি আমাকে গালি দেয়, তাকে হত্যা কর। আর যে আমার সাহাবীকে গালি দেয়, তাকে প্রহার কর।”(জামেউল আহাদীস, হাদীস নং-২২৩৬৬, জামেউল জাওয়ামে, হাদীস নং-৫০৯৭, দায়লামী, ৩/৫৪১, হাদীস নং-৫৬৮৮, আস সারেমুল মাসলূল-৯২)

এই হাদিসটি আপনি পাবেন প্রখ্যাত ইসলামের ফতোয়া বিষয়ক ওয়েবসাইট ইসলাম ওয়েব ডট নেট ওয়েবসাইটে [4]

ما روي عن علي بن أبي طالب رضي الله عنه قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : ” من سب نبيا قتل ، ومن سب أصحابه جلد ” .

একইসাথে উল্লেখ্য, আবু বকর এবং উমর দুইজনই নবীর সাথে সামান্যতম বেয়াদবির জন্য আয়িশা এবং হাফসাকে রীতিমত মারধোর করতেন বলেও সহিহ হাদিস থেকে জানা যায়। নবী মুহাম্মদ যখন আয়িশা এবং হাফসাকে তালাক দেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেই সময়েও আবু বকর এবং ওমর নবীর পক্ষেই উকালতি করেছেন। নিজের মেয়েদের পাশে দাঁড়াননি। সেই সময়ে আয়িশা এবং হাফসা নবীর কাছে খোরপোষ দাবী করেছিল। এই দাবীর কারণে খোদ নবীর সামনেই আবু বকর এবং উমর আয়িশা এবং হাফসাকে কিলঘুষি মারেন। যেই মেয়েদের নিজের পিতা তাদের মারধোর করতো এই কারণে যে, তারা তাদের স্বামী নবী মুহাম্মদের সাথে সামান্যতম দ্বিমত করেছে, ন্যায্য দাবী করেছে, সেই মেয়েরা কীভাবে তাদের পিতার শাসনামলে তাদের মৃত স্বামী সম্পর্কে অভিযোগ করবে? এটি কী কখনো সম্ভব? আসুন হাদিসগুলো পড়ি [5]

সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১৯/ তালাক
পরিচ্ছেদঃ ৪. ইখতিয়ার প্রদান করলে তালাকের নিয়্যাত ছাড়া তালাক হবে না
৩৫৫৭। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ) এসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে উপস্থিতির অনুমতি প্রার্থনা করলেন। তিনি তার দরজায় অনেক লোককে উপবিষ্ট দেখতে পেলেন। তবে তাদের কাউকে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয় নি। তিনি (বর্ণনাকারী) বলেন, এরপর তিনি আবূ বকর (রাঃ) কে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হলে তিনি প্রবেশ করলেন। এরপর উমর (রাঃ) এলেন এবং তিনি অনুমতি প্রার্থনা করলেন। তখন তাকেও প্রবেশের অনুমতি প্রদান করা হল। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে চিন্তিত ও নীরব বসে থাকতে দেখলেন আর তখন তার চতুষ্পার্শ্বে তাঁর সহধর্মিনীগণ উপবিষ্টা ছিলেন।
তিনি (বর্ণানাকারী জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ)) বলেন, উমর (রাঃ) বললেনঃ নিশ্চয়ই আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে এমন কথা বলব যা তাঁকে হাসাবে। এপর তিনি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি যদি দেখতেন খারিজার কন্যা (উমর (রাঃ) এর স্ত্রী) আমার কাছে খোরপোষ তলব করছিল। আমি তার দিকে উঠে গেলাম এবং তার ঘাড়ে ঘুষি মারলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে উঠলেন এবং বললেন, আমার চতুষ্পার্শ্বে তোমরা যাদের দেখতে পাচ্ছ তারা আমার কাছে খোরপোষ দাবী করছে।
অমনি আবূ বকর (রাঃ) আয়িশা (রাঃ) এর দিকে ছুটলেন এবং তাঁর গর্দানে ঘুষি মারলেন। উমর (রাঃ)ও দাঁড়িয়ে গেলেন এবং হাফসা (রাঃ) এর দিকে অগ্রসর হয়ে তাঁর ঘাড়ে ঘুষি মারলেন। তাঁরা উভয়ে বললেন, তোমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এমন জিনিস দাবী করছে যা তাঁর কাছে নেই। তখন তাঁরা (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনীগণ) বললেন, আল্লাহর কসম! আমরা আর কখনো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এমন জিনিস চাইব না যা তাঁর কাছে নেই।
এরপর তিনি তাঁদের (তাঁর সহধর্মিনীগণের) থেকে একমাস কিংবা ঊনত্রিশ দিন পৃথক রইলেন। এপর তাঁর প্রতি এই আয়াত নাযিল হলঃ (অর্থ) “হে নবী! আপনি আপনার সহধর্মিনীদের বলে দিন, তোমরা যদি পার্থিব জীবনের ভোগ ও এর বিলাসিতা কামনা কর, তাহলে এসো আমি তোমাদের ভোগ-বিলাসে ব্যবস্থা করে দেই এবং সৌজন্যের সাথে তোমাদের বিদায় করে দেই। আর যদি তোমরা আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও পরকালকে কামনা কর তাহলে তোমাদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন আল্লাহ তাদের জন্য মহা প্রতিদান প্রস্তুত করে রেখেছেন।” (আহযাবঃ ২৮ ২৯)
তিনি [জাবির (রা)] বলেন, তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আয়িশা (রাঃ) কে দিয়ে (আয়াতের নির্দেশ তামীল করতে) শুরু করলেন। তখন তিনি বললেন, হে আয়িশা! আমি তোমার কাছে একটি (গুরত্বপূর্ণ) বিষয়ে আলাপ করতে চাই। তবে সে বিষয়ে তোমার পিতা-মাতার সঙ্গে পরামর্শ না করে তোমার ত্বরিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করাই আমি পছন্দ করি।
তিনি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! সে বিষয়টা কি (আমি জানতে পারি)? তখন তিনি তার কাছে এই আয়াত তিলাওয়াত করলেন। তিনি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনার ব্যাপারে আমি কি আমার পিতা-মাতার কাছে পরামর্শ নিতে যাব? (এর কোন প্রয়োজন নেই)। না, বরং আমি আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও আখিরাতকেই বেছে নিয়েছি। তবে আপনার সকাশে আমার একান্ত নিবেদন, আমি যা বলেছি সে সম্পর্কে আপনি আপনার অন্যান্য সহধর্মিনীগণের কারো কাছে ব্যক্ত করবেন না। তিনি বললেন, তাদের যে কেউ সে বিষয় আমাকে জিজ্ঞাসা করলে আমি অবশ্যই তাঁকে তা বলে দিব। কারণ আল্লাহ আমাকে কঠোরতা আরোপকারী ও হঠকারীরূপে নয় বরং সহজ পন্থায় (শিক্ষাদানকারী) হিসাবে প্রেরণ করেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ)

শুধু তাই নয়, একবার নবী মুহাম্মদ ও তার অনুসারীদের জন্য পানির ব্যবস্থা করতে দেরী হওয়ায়, আবু বকর আয়িশার কোমরে আঘাত করলেন, সেরকম ঘটনাও হাদিসে বর্ণিত আছে [6]

সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৮৬/ দন্ডবিধি
পরিচ্ছেদঃ ৮৬/৪০. শাসক ব্যতীত অন্য কেউ যদি নিজ পরিবার কিংবা অন্য কাউকে শাসন করে।
وَقَالَ أَبُو سَعِيدٍ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا صَلَّى فَأَرَادَ أَحَدٌ أَنْ يَمُرَّ بَيْنَ يَدَيْهِ فَلْيَدْفَعْهُ فَإِنْ أَبَى فَلْيُقَاتِلْهُ وَفَعَلَهُ أَبُو سَعِيدٍ
আবূ সা’ঈদ (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, কেউ সালাত আদায় করে আর কোন ব্যক্তি তার সম্মুখ দিয়ে অতিক্রম করার ইচ্ছে করে, তাহলে সে যেন তাকে বাধা দেয়। সে যদি বাধা না মানে তাহলে যেন তার সঙ্গে লড়াই করে। আবূ সা’ঈদ (রাঃ) এমন করেছেন।
৬৮৪৪. ’আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আবূ বকর (রাঃ) এলেন। এ সময় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় মাথা আমার ঊরুর ওপর রেখে আছেন। তখন তিনি বললেন, তুমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও লোকদেরকে আটকে রেখেছ, এদিকে তাদের পানির কোন ব্যবস্থা নেই। তিনি আমাকে তিরস্কার করলেন ও নিজ হাত দ্বারা আমার কোমরে আঘাত করতে লাগলেন। আর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অবস্থানই আমাকে নড়াচড়া হতে বিরত রেখেছিল। তখন আল্লাহ্ তায়াম্মুমের আয়াত অবতীর্ণ করলেন।[1] [৩৩৪] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৩৬৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩৮০)
[1] আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ (সাঃ)’র উম্মাতের উপর যে সমস্ত রাহমাত বর্ষণ করেছেন তার একটি হল এই তায়াম্মুমের বিধান। তায়াম্মুমের বিধান আল্লাহ না দিলে ইবাদাত বন্দেগী অনেক সময় দুঃসাধ্য হয়ে পড়ত।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা বিনত আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)

এমনকি, একটি গলার হার হারিয়ে ফেলায় নবীর বিরক্তি উৎপাদন করার জন্যেই আবু বকর আয়িশাকে প্রচণ্ড জোরে থাপ্পড় দিয়েছিলেন বলে জানা যায়। নবীর এরকম অনুগত একজন মানুষ যার পিতা, সেই মেয়েটি তার বাবার খিলাফত আমলে বাবার কাছে নবী সম্পর্কে অভিযোগ করবে, এরকম কল্পনা করাও হাস্যকর [7] [8]

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫২/ তাফসীর
পরিচ্ছেদঃ ২৩৫৫. আল্লাহর বাণীঃ এবং যদি পানি না পাও তবে পবিত্র মাটির দ্বারা তায়াম্মুম করবে (৫ঃ ৬)
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৪২৫৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৬০৮
৪২৫৩। ইয়াহইয়া ইবনু সুলায়মান (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, মদিনায় প্রবেশের পথে বায়দা নামক স্থানে আমার গলার হারটি পড়ে গেল। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে উট বসিয়ে অবস্থান করলেন। তিনি আমার কোলে মাথা রেখে শুয়েছিলেন। আবূ বকর (রাঃ) এসে আমাকে কঠোরভাবে থাপ্পড় লাগালেন এবং বললেন একটি হার হারিয়ে তুমি সকল লোককে আটকে রেখেছ। এদিকে তিনি আমাকে ব্যথা দিয়েছেন, অপর দিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ অবস্থায় আছেন, এতে আমি মৃত্যু যাতনা ভোগ করছিলাম। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাগ্রত হলেন, ফজর সালাত (নামায/নামাজ)-এর সময় হল এবং পানি খোঁজ করে পাওয়া গেল না, তখন নাযিল হলঃيَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلاَةِ‏‏ الآيَةَ‏ হে মু’মিনগণ, যখন তোমরা সালাতের জন্য প্রস্তুত হবে তখন তোমরা তোমাদের মুখমন্ডল ও হাত কণুই পর্যন্ত ধৌত করবে। (৫ঃ ৬)
এরপর উসায়দ ইবনু হুযায়র বললেন, হে আবূ বকরের বংশধর! আল্লাহ তা’আলা তোমাদের কারণে মানুষের জন্য বরকত নাযিল করেছেন। তোমাদের আপাদ মস্তক তাদের জন্য বরকতই বরকত।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা বিনত আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)

সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৫/ কুরআন মাজীদের তাফসীর
পরিচ্ছেদঃ ৬৫/৫/৩. আল্লাহর বাণীঃ পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করবে। (সূরাহ আল-মায়িদাহ ৫/৬)
৪৬০৮. ’আয়িশাহ (রাঃ) বলেছেন, মদিনা্য় প্রবেশের পথে বাইদা নামক স্থানে আমার গলার হারটি পড়ে গেল। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে উট বসিয়ে অবস্থান করলেন। তিনি আমার কোলে মাথা রেখে শুয়েছিলেন। আবূ বকর (রাঃ) এসে আমাকে জোরে থাপ্পড় লাগালেন এবং বললেন একটি হার হারিয়ে তুমি সকল লোককে আটকে রেখেছো। এদিকে তিনি আমাকে ব্যথা দিয়েছেন, অপরদিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ অবস্থায় আছেন, এতে আমি মৃত্যু যাতনা ভোগ করছিলাম। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাগ্রত হলেন, ফজর সালাতের সময় হল এবং পানি খোঁজ করে পাওয়া গেল না, তখন অবতীর্ণ হলঃيٓٓأَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْآ إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغسْلُوْا وَجُوْهكُم …..ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা যখন সালাতের জন্য দাঁড়াতে চাও তখন ধৌত করে নিবে নিজেদের মুখমন্ডল এবং হাত কনুই পর্যন্ত। (সূরাহ আল-মায়িদাহ ৫/৬)
এরপর উসায়দ ইবনু হুযায়র বললেন, হে আবূ বকরের বংশধর! আল্লাহ তা’আলা তোমাদের কারণে মানুষের জন্যে বারাকাত অবতীর্ণ করেছেন। মানুষের জন্য তোমরা হলে কল্যাণ আর কল্যাণ। [৩৩৪] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪২৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪২৫০)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা বিনত আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)

আরেকটি হাদিসে রয়েছে, নবী হার হারিয়ে ফেলার জন্য আয়িশাকে ঘুষিও মেরেছিলেন আবু বকর [9]। প্রশ্ন হচ্ছে, এরকম একজন নবী অনুগত নবীর ওপর অন্ধবিশ্বাস করা লোককের কাছে নবীর বিরুদ্ধে বিচার দেবেন আয়িশা? –

সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৮৬/ দন্ডবিধি
পরিচ্ছেদঃ ৮৬/৪০. শাসক ব্যতীত অন্য কেউ যদি নিজ পরিবার কিংবা অন্য কাউকে শাসন করে।
৬৮৪৫. ’আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আবূ বকর (রাঃ) এলেন ও আমাকে খুব জোরে ঘুষি মারলেন আর বললেন, তুমি লোকজনকে একটি হারের জন্য আটকে রেখেছ। আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অবস্থানের দরুন মরার মত ছিলাম। অথচ তা আমাকে খুবই কষ্ট দিয়েছে। সামনে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। لَكَزَ- وَوَكَزَএকই অর্থের। [৪৪৩] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৩৬৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৩৮১)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা বিনত আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)

তথ্যসূত্র

  1. শাতিমে রাসুল সম্পর্কিত শরিয়তের বিধান []
  2. সূনান নাসাঈ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪০৭২ []
  3. জামেউল আহাদীস, হাদীস নং-২২৩৬৬, জামেউল জাওয়ামে, হাদীস নং-৫০৯৭, দায়লামী, ৩/৫৪১, হাদীস নং-৫৬৮৮, আস সারেমুল মাসলূল-৯২ []
  4.  فصل سب النبي أو الأصحاب []
  5. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩৫৫৭ []
  6. সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিস নম্বরঃ ৬৮৪৪ []
  7. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪২৫৩[]
  8. সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, হাদিস নম্বরঃ ৪৬০৮[]
  9. সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিস নম্বরঃ ৬৮৪৫ []
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন