শয়তান ও নবজাতকের কান্না

Print Friendly, PDF & Email

একটি শিশু জন্মের সময়ই চিৎকার করে কান্না শুরু করে, এমনটি আমরা সকলেই জানি। নবজাতকের ক্ষেত্রে এই কান্না করা একটি শিশুর জন্য খুবই জরুরি একটি বিষয়। মূলত, নবজাতক যদি না কাঁদে, তাহলে প্রায়শই চিকিৎসকের উদ্বিগ্ন হতে দেখা যায়। একটি নবজাতক শিশুর শ্বাসনালী পরিষ্কার করা, তাদের ফুসফুস প্রসারিত করা এবং তাদের প্রথম শ্বাস নিতে এই কান্না খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে, সমস্ত বাচ্চা জন্মের পরপরই কান্নাকাটি করে না। কিন্তু কান্না না করলে সামনে থাকা চিকিৎসক সাধারণত তাদের পিঠে বা পা ঘষে বা তাদের মুখ এবং নাক থেকে শ্লেষ্মা চুষিয়ে বাচ্চাকে কাঁদতে উত্সাহিত করেন। এই কাজগুলো করা হয় বাচ্চাকে তাদের প্রথম শ্বাস নিতে এবং কাঁদতে শুরু করতে উত্সাহিত করতে। যদি এই ব্যবস্থাগুলি ব্যর্থ হয় এবং শিশু এখনও কাঁদতে না পারে তবে এটি আরও গুরুতর সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। শিশুটি শ্বাসকষ্টের ঝামেলা অনুভব করতে পারে, যা অবরুদ্ধ শ্বাসনালী, জন্মগত অস্বাভাবিকতা বা সংক্রমণের মতো বিভিন্ন সমস্যার কারণে হতে পারে। এই ক্ষেত্রে, মেডিকেল টিম বাচ্চাকে শ্বাস নিতে এবং তাদের অবস্থা স্থিতিশীল করতে সহায়তা করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।

উল্লেখ্য, জন্মের সময় বাচ্চারা কেঁদে ওঠে, যা বাচ্চার জন্য অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়। বাচ্চা না কাঁদলে বুঝতে হবে, বড় ধরণের কোন সমস্যা হয়েছে। জন্মের আগে বাচ্চারা তাদের মায়ের দেহের সঙ্গে সংযুক্ত আম্বিলিক্যাল কর্ড বা নাভিরজ্জুর মধ্য দিয়ে শ্বাস নেয়। জন্মের কয়েক সেকেন্ড পর শিশু নিজে থেকেই শ্বাস নেয়। শিশু যখন গর্ভের বাইরে আসে, তখন শরীরের বিভিন্ন ফ্লুইড নিঃসরণের ফলে আটকে যায় হৃৎপিণ্ডের শ্বাস-প্রশ্বাসের পথ। তখন শিশু চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে। এই কান্নার ফলেই পরিষ্কার হয়ে যায় শ্বাস-প্রশ্বাসের পথ। তার পর সে স্বাভাবিকভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারে।

ইসলামী বিশ্বাস অনুসারে, জন্মের সময় নবজাতক শিশুর কান্না একটি শয়তানি কাজ, অর্থাৎ শয়তানের খোঁচার কারণে এটি ঘটে থাকে। যার থেকে বোঝা যায়, ইসলামী বিশ্বাস অনুসারে এই কাজটি অকল্যাণকর এবং খারাপ ব্যাপার, অথচ আধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে এটি স্পষ্ট যে, জন্মের পর পর নবজাতকের কান্না তার জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বরঞ্চ না কান্নাই একটি অস্বাভাবিকত্বের লক্ষণ, যার সুচিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে[1]। ইসলাম বাচ্চাদের জন্মের সময় কান্নাকে শয়তানের খোঁচা হিসেবে চিহ্নিত করে একে একটি খারাপ বা অশুভ বিষয় বলে প্রচার করে, যা খুবই ভয়ঙ্কর বিষয়। এর ফলে জন্মের সময় বাচ্চারা না কাঁদলে পিতামাতা বা আত্মীয়রা সেই বাচ্চাকে ওলী আউলিয়া ভেবে নিতে পারে, কারণ তাকে শয়তানে খোঁচা দিতে পারে নি। এটি সুস্থ বাচ্চার লক্ষণ নয়, বরঞ্চ অসুস্থ বাচ্চার লক্ষণ। [2]

সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬০/ আম্বিয়া কিরাম (‘আঃ)
পরিচ্ছেদঃ ৬০/৪৪. মহান আল্লাহর বাণী
আর স্মরণ কর, কিতাবে মারিয়ামের ঘটনা। যখন তিনি স্বীয় পরিবার-পরিজন হতে পৃথক হলেন…..। (মারইয়াম ১৬) মহান আল্লাহর বাণীঃ স্মরণ কর, যখন ফেরেশতারা বললঃ হে মারইয়াম! নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর তরফ থেকে তোমাকে একটি কালিমার সুসংবাদ দিচ্ছেন। (আলে ইমরান ৪৫) মহান আল্লাহর বাণীঃ আল্লাহ্ আদম (আঃ), নূহ (আঃ) ও ইব্রাহীম (আঃ)-এর বংশধর এবং ইমরানের বংশধরকে পৃথিবীতে মনোনীত করেছেন…..বে-হিসাব দিয়ে থাকেন। (আলে ইমরান ৩৩-৩৭)
ঈব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, আলু-ইমরান অর্থাৎ মু’মিনগণ। যেমন, আলু-ইব্রাহীম, আলূ ইয়াসীন এবং আলু মুহাম্মাদ। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেনঃ সমস্ত মানুষের মধ্যে ইব্রাহীমের সব থেকে ঘনিষ্ঠ হলো তারা, যারা তাঁর অনুসরণ করে। আর তারা হলেন মু’মিনগণ। آلُ এর মূল হলো أَهْلُ আর أَهْلُ কে ছোট অর্থে করা হলে তা أُهَيْلٌ হয়।
৩৪৩১. আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, এমন কোন আদম সন্তান নেই, যাকে জন্মের সময় শয়তান স্পর্শ করে না। জন্মের সময় শয়তানের স্পর্শের কারণেই সে চিৎকার করে কাঁদে। তবে মারইয়াম এবং তাঁর ছেলে (ঈসা) (আঃ)-এর ব্যতিক্রম। অতঃপর আবূ হুরাইরাহ্ বলেন, ‘‘হে আল্লাহ্! নিশ্চয় আমি আপনার নিকট তাঁর এবং তাঁর বংশধরদের জন্য বিতাড়িত শয়তান হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (৩২৮৬, মুসলিম ৪৩/৪০ হাঃ ২৩৬৬, আহমাদ ৭১৮৫) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩১৭৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩১৮৭)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)

সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৫৯/ সৃষ্টির সূচনা
পরিচ্ছদঃ ৫৯/১১. ইবলীস ও তার বাহিনীর বর্ণনা।
৩২৮৬. আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক আদাম সন্তানের জন্মের সময় তার পার্শ্বদেশে শয়তান তার দুই আঙ্গুল দ্বারা খোঁচা মারে। ‘ঈসা ইবনু মরয়াম (আঃ)-এর ব্যতিক্রম। সে তাঁকে খোঁচা মারতে গিয়েছিল। তখন সে পর্দার ওপর খোঁচা মারে। (৩৪৩১, ৪৫৪৮) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩০৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩০৫৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

তথ্যসূত্র

  1. সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩৪৩১ []
  2. সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩২৮৬ []
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন