মুহাম্মদের সাহাবীগণ মানুষকে কীভাবে হত্যা করতো, তার কিছু নমুনা দেখে নেয়া যাক। উল্লেখ্য, এই কাজে নবী মুহাম্মদের সম্পূর্ণ সমর্থন থাকতো। আসুন উম্মে কিরফা নামক একজন মহিলা নেত্রীকে নবীর পালিত পুত্র কীভাবে হত্যা করেছিল সেটি দেখে নিই, [1] –
হাফিজ আসকালানী র. বলেন, এখানে ইমাম বুখারী র. এর উদ্দেশ্য এই সর্বশেষ যুদ্ধই। যাকে বলে সারিয়্যায়ে উম্মে কিরফা।
উম্মে কিরফা (কাফের নিচে যের, রায়ের উপর জযম, পরবর্তীতে ফা।) এটি এক মহিলার উপনাম। যার আসল নাম ছিল ফাতিমা বিনতে রাবীআ । এ মহিলা ছিল বনু ফাযারার নেত্রী। এ যুদ্ধকে সারিয়্যায়ে বনু ফাযারাও বলতে পারেন ।
সারিয়্যায়ে উম্মে কিরফা
হযরত যায়েদ ইবনে হারিসা রা. বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে শাম গিয়েছিলেন। সাহাবায়ে কিরামের মাল সম্পদও তাঁর সাথে ছিল। প্রত্যাবর্তনকালে বনু ফাযারার লোকজন তাঁকে মেরে আহত করে এবং সমস্ত মালসামান ছিনিয়ে নেয়। হযরত যায়েদ রা. মদীনায় ফিরে এলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের দমনের জন্য হযরত যায়েদ রা. এর নেতৃত্বে একটি বাহিনী পাঠান। এবার হযরত যায়েদ রা. বনু ফাযারা থেকে প্রতিশোধ নেন । কিছু সংখ্যককে হত্যা করেন, অবশিষ্টরা পালিয়ে যায়। হাফিজ আসকালানী র. লিখেন, বনু ফাযারার নেত্রী উম্মে কিরাকে হযরত যায়েদ রা. দু’টি ঘোড়ার লেজে বেঁধে টেনে আনেন। ফলে সে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। তার এক কন্যা ছিল খুবই রূপসী। তাকে গ্রেফতার করে মহিলাদের সাথে মদীনায় নিয়ে আসেন।
![15.যায়েদের উম্মে কিরফা হত্যাকাণ্ড 1](https://i0.wp.com/www.shongshoy.com/wp-content/uploads/2024/06/Xnip2024-06-30_15-14-25-1.jpg?resize=800%2C1005&ssl=1)
আসুন এই ঘটনাটি ভালভাবে বোঝার জন্য একটি হাদিস পড়ে নিই,
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৩৩/ জিহাদ ও এর নীতিমালা
পরিচ্ছেদঃ ১৪. নফল (বিশেষ পুরস্কার ও অনুদান) হিসাবে কিছু দেওয়া এবং বন্দীদের বিনিময়ে (আটকে পড়া) মুসলিমদের মুক্ত করা
৪৪২১। যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) … ইয়াস ইবন সালামা (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার পিতা বলেছেন, আমরা ফাযারা গোত্রের সাথে যুদ্ধ করেছিলাম। আমাদের আমীর ছিলেন আবূ বকর (রাঃ)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আমাদের আমীর নিযুক্ত করেছিলেন যখন আমাদের এবং (গোত্রের) পানির স্থানের মাঝে এক ঘণ্টা সময়ের ব্যবধান ছিল, তখন আবূ বকর (রাঃ) আমাদেরকে শেষ রাতের অবতরণের (বিশ্রামের) নির্দেশ দিলেন। সুতরাং আমরা রাতের শেষাংশেই সেখানে অবতরণ করলাম। এরপর বিভিন্ন দিক দিয়ে অতর্কিত আক্রমণ চালালেন এবং পানি পর্যন্ত পৌছলেন। আর যাদের পেলেন হত্যা করলেন এবং বন্দী করলেন।
আমি লোকদের একটি দলের দিকে দেখছিলাম যাদের মধ্যে শিশু ও নারী রয়েছে। আমি আশংকা করছিলাম যে, তারা হয়তো আমার আগেই পাহাড়ে পৌছে যাবে। অতএব, আমি তাদের ও পাহাড়ের মাঝে তীর নিক্ষেপ করলাম। তারা যখন তীর দেখতে পেল থেমে গেল। তখন আমি তাদেরকে হাঁকিয়ে নিয়ে এলাম। তাদের মাঝে চামড়ার পোশাক পরিহিত বনী ফযরার একজন মহিলাও ছিল এবং তার সঙ্গে ছিল তার এক কন্যা। সে ছিল আরবের সব চাইতে সুন্দরী কন্যা। আমি সকলকেই হাকিয়ে আবূ বকর (রাঃ) এর কাছে নিকট এলাম। আবূ বকর (রাঃ) কন্যাটিকে আমাকে নফল হিসাবে প্রদান করলেন।
এরপর আমি মদিনায় ফিরে এলাম। আমি তখনও তার বস্ত্র উন্মোচন করিনি। পরে বাজারে আমার সাথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাক্ষাৎ হলে তিনি বললেনঃ হে সালামা! তুমি মহিলাটি আমাকে দিয়ে দাও। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তাকে আমার খবুই পছন্দ হয়েছে এবং এখনও আমি তার বস্ত্র উন্মোচন করিনি। পরের দিন আবারও বাজারে আমার সাথে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাক্ষাৎ হলো। তখন তিনি বললেনঃ হে সালামা! তুমি মহিলাটি আমাকে দিয়ে দাও। “আল্লাহ তোমার পিতাকে কতই সুপুত্র দান করেছেন।” তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! সে আপনার জন্যই আল্লাহর কসম! আমি তার বস্ত্র উমোচন করিনি। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ কন্যাটিকে মক্কায় পাঠিয়ে দিয়ে তার কয়েকজন মুসলিমের মুক্তির ব্যবস্থা করলেন, যারা মক্কায় বন্দী ছিল।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ ইয়াস ইবনু সালামাহ ইবনু আকওয়াহ (রহঃ)
উপরের হাদিসে লক্ষ্য করুন, ফাযারা গোত্রের সাথে যুদ্ধের সময় চামড়ার পোশাক পরিহিত বনী ফযরার একজন মহিলা ও তার অত্যন্ত সুন্দরী এক কন্যাকে বন্দী করার কথা বলা হচ্ছে। অর্থাৎ মা এবং মেয়ে। এই মা এবং মেয়ে কে বা কারা, আসুন সেটি আমরা বিশ্লেষণ করি। সহিহ মুসলিম গ্রন্থে এই মহিলার নামটি না বললেও, আর রাহুকুল মাখতুম গ্রন্থে এই মহিলার নাম বলে দেয়া হয়েছে। [2] –
![15.যায়েদের উম্মে কিরফা হত্যাকাণ্ড 3 2](https://i0.wp.com/www.shongshoy.com/wp-content/uploads/2024/06/Xnip2024-06-30_16-13-38.jpg?resize=800%2C708&ssl=1)
এবারে আসুন ইবনে ইসহাকের সিরাতে রাসুলাল্লাহ গ্রন্থ থেকে উম্মে কিরফার মৃত্যু সম্পর্কিত বিবরণ পড়ে নেয়া যাক, [3] –
জায়েদ ইবনে হারিসা বনু ফাজারা আক্রমণ করেন । উম্মে কুরফার মৃত্যু
জায়েদ ওয়াদিল কুরাও আক্রমণ করেছিলেন। সেখানে তাঁর মোকাবিলা হয় বনু ফাজারার এবং তাঁর কতিপয় অনুচর নিহত হন। তিনি নিজেও যুদ্ধক্ষেত্র থেকে জখম হয়ে ফিরেন। বনু সাদ ইবনে হুদায়লের ওয়ার্দ ইবনে আমর বন্ধু বদরের একজনের হাতে নিহত হন। জায়েদ এসে তা শুনে প্রতিজ্ঞা করলেন, বনু ফাজারায় আক্রমণ না করা পর্যন্ত তিনি পানি স্পর্শ করবেন না। জখম ভালো হতেই রাসুল (সা.) তাঁকে সৈন্যদল নিয়ে পাঠালেন তাদের বিরুদ্ধে। ওয়াদিল কুরায় তাদের সঙ্গে সংঘর্ষ হলো, তাদের কয়েকজনকে তিনি হত্যা করলেন। কায়েস ইবনে আল-মুসাহহার আল-ইয়ামুরির হাতে নিহত হলো মাসাদা ইবনে হাকামা। উম্মে কিরফা ফাতেমা বিনতে রাবিয়া বন্দী হলেন। তিনি ছিলেন মালিকের স্ত্রী। তাঁর মেয়ে ও আবদুল্লাহ ইবনে মাসাদাও বন্দী হয়। কায়েস ইবনে আল-মুসাহহারকে জায়েদ হুকুম দিলেন উম্মে কিরফাকে হত্যা করতে। নিষ্ঠুরভাবে তাকে হত্যা করা হলো। উম্মে কিরফার মেয়ে ও মাসাদার ছেলেকে আনা হলো রাসুলের (সা.) কাছে। উম্মে কিরফার মেয়ের মালিক ছিল সালামা ইবনে আমর, তিনিই তাকে বন্দী করেন। সমাজে বিশেষ আসন ছিল এই মহিলার। আরবরা বলত, “উম্মে কিরফার চেয়ে বেশি ক্ষমতা থাকলেও এর বেশি কিছু তোমরা করতে পারতে না। সালামা রাসুলের (সা.) কাছ থেকে তাকে চেয়ে নিয়ে তার চাচা হাজন ইবনে আবু ওয়াহবকে তাকে উপহার দিলেন। তার গর্ভে জন্ম হয় আবদুর রহমান ইবনে হাজনের।’
মাসাদা হত্যা সম্পর্কে কায়েস ইবনে মুসাহহার বলেন :
তার মায়ের ছেলের মতো আমি চেষ্টা করেছি
ওয়ার্দের প্রতিশোধ নিতে।
যত দিন বাঁচব ওয়ার্দের বদলা নেব।
ওকে দেখেই ওকে আক্রমণ করলাম,
বদর পরিবারের দুর্ধর্ষ সেই যোদ্ধাকে।
কাদাবি বর্ণায় তাকে বিদ্ধ করলাম।
বিদ্ধ হওয়ার সময় আগুনের মতো তা ঝলসে উঠেছিল।
![15.যায়েদের উম্মে কিরফা হত্যাকাণ্ড 5 4](https://i0.wp.com/www.shongshoy.com/wp-content/uploads/2024/06/Xnip2024-06-30_16-38-36.jpg?resize=800%2C689&ssl=1)