আসুন শুরুতেই প্রখ্যাত আলেম ড. আবু বকর যাকারিয়ার মুখ থেকেই সরাসরি শুনি, নাসেখ মানসুখ বিষয়টি সম্পর্কে,
ناسخ (নাসিখুন) ইস্মে ফায়িল এর একবচন। نسخ (নাস্খুন) মূলধাতু থেকে নির্গত। যার লুগাতী বা আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, বদল করা, দূরীভূত করা, স্থলাভিষিক্ত করা, বাতিল করা, পরিবর্তণ করা, চুড়ান্ত ব্যাখ্যা করা ইত্যাদি। তবে ناسخ (নাসিখুন) শব্দের অর্থ হচ্ছে ব্যাখাকারী।
منسوخ (মানসূখুন) শব্দটি অনুরূপ نسخ (নাস্খুন) মূলধাতু থেকে উদগত। যার লুগাতী বা আভিধানিক অর্থ হলো, বদল করা, দূরীভূত করা, স্থলাভিষিক্ত করা, বাতিল করা, পরিবর্তণ করা, চুড়ান্ত ব্যাখ্যা করা ইত্যাদি।
এই বিষয় দুইটি নিয়ে সাধারণত আম মৌলানারা কখনো মুখ খোলেন না। তবে ইসলাম নিয়ে পড়ালেখা করলে বিভিন্ন সময় ইসলামিক আলেমদের বইপত্রগুলোতে নাসেখ মানসুখ শব্দগুলো পাওয়া যায়। এই শব্দগুলো খুব ভালভাবে জানা এবং বোঝা ইসলামকে সামগ্রিকভাবে বোঝার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নাসেখের অর্থ হলো, যা রহিত করে। ‘নসখ’ এর বিপরীত অর্থ প্রকাশ করে ‘মানসুখ’ শব্দটি। মানসুখ অর্থ হচ্ছে, যা রহিত করা হয়েছে। কোরআনের কিছু আয়াতকে ‘মানসুখ’ বা রহিত আয়াত এবং আরো কিছু আয়াতকে ‘নসখ’ বা পরিমার্জিত আয়াত বলা হয়। নসখ আয়াতের বিধান দ্বারা মানসুখ আয়াতের বিধান রহিত ও প্রতিস্থাপিত হয়। অর্থাৎ, আল্লাহ পাক মাঝে মাঝেই বিভিন্ন আয়াত নাজিল করে, সেই আয়াত আবার রহিত করেছেন, নতুন আয়াত নাজিল করেছেন। বিষয়টি কোরআনের অবিকৃত হওয়ার বিরুদ্ধে এক বিশাল ধাক্কা। যদিও মুসলিমগণ এখানেও মুখ উচিয়ে বলবেন, এই সংস্কার, পরিমার্জনাও আল্লাহর ইচ্ছাতেই হয়েছে।
এবং যখন আমি এক আয়াতের স্থলে অন্য আয়াত উপস্থিত করি এবং আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেন তিনিই সে সম্পর্কে ভাল জানেন;
আমি কোন আয়াত রহিত করলে অথবা বিস্মৃত করিয়ে দিলে তদপেক্ষা উত্তম অথবা তার সমপর্যায়ের আয়াত আনয়ন করি। তুমি কি জান না যে, আল্লাহ সব কিছুর উপর শক্তিমান?
সেই সাথে, সহিহ হাদিসেও এই বিষয়ে পরিষ্কার বলা আছে যে, আল্লাহ পাকের নাজিলকৃত কোন কোন আয়াত বাতিল হতে পারে। [3]
সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫২/ তাফসীর
হাদিস নাম্বার: ৪১৭৪
৪১৭৪। উমাইয়া (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উসমান ইবনু ‘আফফান (রাঃ) কে উক্ত আয়াত সম্পর্কে বললাম যে, এ আয়াত তো অন্য আয়াত দ্বারা মানসুখ (রহিত) হয়ে গেছে। অতএব উক্ত আয়াত আপনি মুসহাফে লিখেছেন (অথবা রাবী বলেন) কেন বর্জন করছেন না, তখন তিনি (উসমান (রাঃ)) বললেন, হে ভাতিজা আমি মুসহাফের স্থান থেকে কোন জিনিস পরিবর্তন করব না।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
এ থেকে পরিষ্কারভাবেই বোঝা যায়, আল্লাহ পাক তার নাজিলকৃত আয়াতসমূহে মাঝে মাঝে পরিবর্তন আনেন। প্রয়োজনমাফিক তিনি সংশোধন করেন। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে সংশয় ডট কমের সংকলন দেখুন।
মুহাম্মদের সাহাবীগণ, তাবে তাবেইন এবং প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলারগণের মত হচ্ছে, অন্তত পাঁচশ আয়াত রহিত হয়ে গেছে। এসব আয়াতের বিধান এখন আর কার্যকর নয়, যদিও এর প্রায় সবই এখনো কোরআনে রয়েছে। নাসেখ মানসুখের ওপর ভিত্তি করে কোরআনের সূরাগুলোকে চারভাগে ভাগ করা হয়েছেঃ
- ৩০টি সূরায় নাসেখ মানসুখ উভয় ধরণের আয়াত রয়েছে। অর্থাৎ, এসব সূরায় বিধান রহিতকারী আয়াতও রয়েছে, পাশাপাশি পুরাতন বিধান সমৃদ্ধ আয়াতও রয়েছে।
- ৩৬টি সূরায় শুধু মানসুখ আয়াতসমূহ রয়েছে। এদেরকে যে আয়াতগুলো রহিত করেছে, সেগুলো অন্য সূরায় স্থান পেয়েছে কিংবা এদের পরিবর্তে অন্য কোন আয়াত পাঠানো হয়নি।
- ৬টি সূরায় শুধু নসখ আয়াতসমূহ রয়েছে। এই আয়াতগুলো যাদেরকে রহিত করেছে, সেগুলো অন্য সূরায় উল্লেখ করা হয়েছে।
- ৪২টি সূরায় নসখ বা মানসুখ জাতীয় কোন আয়াত নেই। এগুলো ঝামেলামুক্ত।
আসুন শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী এর খ্যাতনাম গ্রন্থ আল ফাউযুল কবীর ফি উসুলিত তাফসীর থেকে সরাসরি পড়ি। [4]
তথ্যসূত্র
- সূরা নাহলঃ ১০১ [↑]
- সূরা বাকারাঃ ১০৬ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নাম্বারঃ ৪১৭৪ [↑]
- আল ফাউযুল কবীর ফি উসুলিত তাফসীর, শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী [↑]