06.প্রাধিকারের কুযুক্তি | Argument from authority

Print Friendly, PDF & Email

দাবীঃ অমুক বিজ্ঞানী ভাগ্য পরিবর্তনের আংটি পরতো, তাই আংটি ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে।
দাবীঃ অমুক দর্শনের পণ্ডিত পীরবাবার পানিপড়া খেতো, অতএব পানিপড়া খেলে অসুখ সারে।
দাবীঃ অমুক বিখ্যাত ডাক্তার ওঝার শরণাপন্ন হয়েছিল, অর্থাৎ ওঝা রোগ সারাতে পারে।

উপরের দাবীগুলোকে প্রাধিকারের কুযুক্তি বা ফ্যালাসি বলে। কোন বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে এক ধরণের কর্তৃত্ব আরোপ করা, এবং তার নামকে যুক্তি হিসেবে ব্যবহার করাকে কুযুক্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। এই ধরণের ঘটনা কোনকিছু প্রমাণ বা অপ্রমাণ করতে পারে না। কোন বিখ্যাত মানুষ কী বলেছেন বা করেছেন বা শুনেছেন, তার ওপর যুক্তি নির্ভরশীল নয়। যেমন, বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং এর নাস্তিক হওয়া নাস্তিক্যবাদের যথার্থতার কোন প্রমাণ নয়। আবার একইভাবে, নিউটনের আস্তিক থাকাটিও ঈশ্বরের অস্তিত্বের সপক্ষের প্রমাণ নয়। ঈশ্বর আছে কী নেই, তা স্টিফেন হকিং বা আইজ্যাক নিউটনের ব্যক্তিগত বিশ্বাস অবিশ্বাসের ওপর নয়, ঈশ্বরের সপক্ষে কতটুকু যুক্তি রয়েছে তার ওপর নির্ভরশীল। তা ব্যক্তির বিশ্বাস অবিশ্বাস নিরপেক্ষ। কে কত বড় বিখ্যাত বা অখ্যাত বা পণ্ডিত বা বিশেষজ্ঞ, তার উল্লেখ করে তাদের বিশ্বাস বা অবিশ্বাসকে প্রমাণ করা যায় না। তবে, স্টিফেন হকিং বা আইজ্যাক নিউটন যেসমস্ত যুক্তি বা প্রমাণ ব্যবহার করেছেন, সেগুলো যুক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। কিন্তু যুক্তিহীনভাবে বিখ্যাত কারও নাম উল্লেখ করে কোন দাবী করলে সেই দাবীকে প্রাধিকারের কুযুক্তিই বলবো।

অনেকে আবার এই কুযুক্তি ভুলভাবে বুঝতে পারেন, তাই আরো একটি বিষয় ব্যাখ্যা করা জরুরি। যখন কোন বিষয়ের ওপর কোন গবেষক তার গবেষণালব্ধ যৌক্তিক দাবী উপস্থাপন করবেন, সেটি আর প্রাধিকারের কুযুক্তি বা Argument from authority বলে গণ্য হবে না। যেমন ধরুন, কেউ আরবি ভাষার ওপর ৪০ বছর ধরে পড়ালেখা করে একটি আরবি বইকে বাঙলায় অনুবাদ করেছেন। আর অন্য একজন দুই মাস আরবি শিখে আরবি ডিকশোনারি দেখে সেই একই বইটির বাঙলা অর্থ বুঝেছেন। এই দুই ব্যক্তির মধ্যে যিনি এই বিষয়ে অভিজ্ঞ, এবং রীতিমত প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা করে সেই জ্ঞান অর্জন করেছেন, তার রেফারেন্সই সঠিক রেফারেন্স হিসেবে গণ্য হবে। কোন বিষয়ের ওপর যিনি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পড়ালেখা বা গবেষণা করেছেন, তার দেয়া রেফারেন্স ভিন্ন আরেকজনার রেফারেন্সের চাইতে সঠিক বলে গণ্য করতে হবে, যতক্ষণ না তার রেফারেন্সকে যৌক্তিকভাবে ভুল প্রমাণ করা যাচ্ছে।