14.জ্ঞানতাত্ত্বিক পক্ষপাত | কগনিটিভ বায়াস | Confirmation Bias

Print Friendly, PDF & Email

কগনিটিভ বায়াস অর্থ হচ্ছে জ্ঞানতাত্ত্বিক পক্ষপাত যা আসলে আরোহী যুক্তির একটি পদ্ধতিগত ভুল। মানুষের আবেগ, পূর্ব থেকে নিয়ে আসা বিশ্বাস, পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত ধর্ম, ছোটবেলা থেকে শিখে আসা সংস্কার, এইসবই তার সামনে থাকা তথ্যপ্রমাণগুলোর মধ্যে গ্রহণ বর্জনের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে। অর্থাৎ সে যা শুনতে চায়, যা শুনলে সে আনন্দিত হয়, যা তার বিশ্বাসকে স্বস্তি দেয়, সেই ধরণের তথ্য প্রমাণ সম্পর্কে অবচেতনভাবেই তার পক্ষপাত। একজন ব্যক্তি যখন বিষয়ীগতভাবে তথ্য সংগ্রহ বা স্মরণ রাখে, তখন তার পূর্ব ধারণা বা সংস্কার বা বিশ্বাসের সাথে যা মিলে যায়, সেই সব তথ্যের প্রতি তার এক ধরণের পক্ষপাত থাকে। তার মধ্যে তাড়না থাকে যে, সে যেই মতবাদ বা বিশ্বাস লালন করে, সেগুলো যেন সত্য প্রমাণ করা যায়। শুধুমাত্র সেইসবের পক্ষে থাকা তথ্যপ্রমাণই তার কাছে সত্যিকারের তথ্যপ্রমাণ বলে মনে হয়। অপরদিকে, যেসব তথ্য প্রমাণ তার মতবাদ বা বিশ্বাসের বিরুদ্ধে যায়, তা যত শক্তিশালী বা স্পষ্টই হোক না কেন, সে সেগুলো এড়িয়ে যায় বা সেগুলো প্রত্যাখ্যান করার চেষ্টা করে। তথ্যপ্রমাণ থেকে যতটুকু তার পক্ষে গেছে, সেগুলো সে কাজে লাগায় এবং মনে রাখে তার বিশ্বাস বা মতবাদকে আরও শক্তভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে। এই প্রবণতাটিই হলো ‘কনফার্মেশন বায়াস’ বা ‘কগনিটিভ বায়াস‘, যা একটি ভুল পদ্ধতি।

বিজ্ঞানীগণ গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ পেয়েছেন যে, মানুষের মস্তিষ্ক হচ্ছে একটি প্যাটার্ন রিকগনাইজিং মেশিন। অর্থাৎ সে প্রতিনিয়ত প্যাটার্ন খোঁজে। সে যখন মেঘের দিকে তাকায়, সে মাঝে মাঝেই ঘোড়া, হাতি কিংবা কোন মানুষকে দেখতে পায়। কিন্তু সেই মেঘটি হয়তো আদতে কোন ঘোড়া বা হাতি বা মানুষের মত আকৃতির নয়। কিন্তু তার মস্তিষ্ক যেহেতু প্যাটার্ন খোঁজে, সে মেঘের মধ্যে এরকম কিছু না কিছু বের করেই ফেলে। একইভাবে, মস্তিষ্ক সবসময় আপনার বিশ্বাসকে দৃঢ় করার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সেই সব স্মৃতি আপনাকে বারবার মনে করিয়ে দেয়, যা আপনাকে আনন্দ দেয়। এই আনন্দটুকু পেলে আপনার মন ভাল হয়ে যায়, সেই প্রক্রিয়াটি বুঝতে পেরে আপনার মগজ কাজটি বারবার করে, নিজেকে আনন্দ দেয়ার চেষ্টায়। এই কারণে, আপনি যখন অনেকগুলো তথ্যপ্রমাণ পড়েন, তার মধ্যে সেইগুলোই আপনার মস্তিষ্কে বেশি বেশি বার এক্সেস হয়, যেই সব স্মৃতি আপনি বারবার মনে করেছেন। আর এই কারণেই আপনার ভেতরে কনফার্মেশন বায়াসের উদ্ভব ঘটে।

যেহেতু আপনি মুসলিম পরিবারে জন্মেছেন এবং ছোটবেলা থেকে ইসলাম ধর্মকেই সত্য বলে মেনে নিয়েছেন, তাই আপনার দাবী হচ্ছে, পৃথিবীর ৪২০০ টি ধর্মের মধ্যে আপনার ধর্মটিই একমাত্র সত্য এবং সঠিক। বাদবাকি সবই ভুয়া এবং বিকৃত। আপনি ভারতের কোন হিন্দু পরিবারে জন্মালে ঠিক একইভাবে একই যুক্তিতে হিন্দু ধর্মটিই পৃথিবীর একমাত্র সত্য ধর্ম বলে তখন আপনার মনে হতো। যেহেতু আপনি কোন ধর্মটি সঠিক তা তথ্য প্রমাণ দিয়ে যাচাই বাছাই না করে শুরুতেই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, জন্মসূত্রে পাওয়া আপনার ধর্মটিই একমাত্র সঠিক, তাই আপনার দাবী পক্ষপাতদোষে দুষ্ট। তাই এই যুক্তিটি একটি কুযুক্তি বা ফ্যালাসি। পৃথিবীর বেশিরভাগ ধার্মিক মানুষই মনে করেন, তিনি যেই পরিবারে ঘটনাচক্রে জন্মেছেন, সেই পরিবারের ধর্মটিই একমাত্র সত্য। তিনি তার ধর্মের সপক্ষে যেসকল যুক্তি আছে, সেগুলো খুঁজে বের করেন, এবং সেইগুলোই প্রচার করেন। তার ধর্মের বিপক্ষের যুক্তিগুলোকে তিনি এড়িয়ে যান বা বাতিল করে দেন।

Confirmation Bias Fallacy কুযুক্তি বা ফ্যালাসি