যুক্তিবিদ্যায় এটি একটি ইনফর্মাল লজিক্যাল ফ্যালাসি। যখন কেউ এক্স নামক একটি সমস্যার কথা উল্লেখ করে, এবং এটি কেন একটি সমস্যা তার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করে, তখন এক্স এর পক্ষের বক্তা যদি ওয়াই নামক আরেকটি সমস্যার কথা উল্লেখ করে, এবং এক্স ও ওয়াইকে তুলনা করার মাধ্যমে এক্সকে অপেক্ষাকৃত কম সমস্যাযুক্ত বলে প্রমাণের চেষ্টা করে- যার মাধ্যমে বস্তুতপক্ষে ওয়াইকে অবজেকটিভলি ভাল বা উত্তম বা আদর্শিক কাজ বলে চালিয়ে দেয়া যায়, তখন “নট এস ব্যাড এস” বা “ফ্যালাসি অফ রিলেটিভ প্রাইভেশন” নামক লজিক্যাল ফ্যালাসিটির উদ্ভব ঘটে। এর অর্থ হচ্ছে, যখনই কেউ আপনার কোন কাজের সমালোচনা করতে আসবে, আপনি স্রেফ তাকে আরেকজনার আরেকটি অধিক বাজে কাজের উদাহরণ উল্লেখ করে আপনার বাজে কাজটিকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করবেন, তখনই এই ফ্যালাসিটি ঘটে।
উদাহরণঃ-
- কলিমুদ্দীন স্বর্ণের দোকানে চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে।
- কলিমুদ্দীন বলছে, “আরে, দেশে কত বড় বড় দুর্নীতি হচ্ছে। তারেক জিয়া কত দুর্নীতি করছে, সালমান এফ রহমান শেয়ার মার্কেটের কোটি কোটি টাকা লোপাট করে দিলো। আর হাসিনার ছেলে জয় আমেরিকায় কতগুলা বাড়ি কিনেছে। সেই তুলনায় আমি তো অনেক ভাল। তাই আমার চুরিটি কোন অপরাধ হতে পারে না।
- ( কিন্তু অন্য সকলে চুরি করলেও, কলিমুদ্দীনের চুরিটি তো তাতে বৈধতা পায় না। সেটি অপরাধই থাকে। )
- বাঙলাদেশে প্রায় প্রতিটি সরকারী অফিসেই দুর্নীতি হয়।
- কিন্তু উগান্ডায় তো আরো বেশি দুর্নীতি হয়। পাকিস্তানেও দুর্নীতি হয়। উগান্ডা বা পাকিস্তানের চাইতে বাঙলাদেশে অনেক কম দুর্নীতি হয়। সেই সাথে, বিএনপি সরকারের আমলেও তো দুর্নীতি হতো। আপনার প্রেক্ষাপট, পরিপ্রেক্ষিত বুঝতে হবে। আমার দল আওয়ামী লীগ দেশে দুর্নীতি চালু করে নি। এটি দেশে আগে থেকেই প্রচলিত ছিল। তৎকালীন বিএনপি জামাতের সময়ে জোর করে ঘুষ আদায় করা হতো। কিন্তু আমার দল ক্ষমতায় আসার পরে আর বেশী জোর করা হয় না। ঘুষ নেয়ার পরে সরকারী অফিসে কফিও খাওয়ানো হয়। তাই বলা যায়, বাঙলাদেশে কোন দুর্নীতি হয় না। বা হলেও, সেটি বৈধ দুর্নীতি।
- ( কিন্তু অন্য দেশে দুর্নীতি হয়, বা আগের আমলে দুর্নীতি ছিল, এগুলো তো এটি প্রমাণ করে না যে, এখনকার সময়ে দুর্নীতি হয় না। এগুলো তো দুর্নীতিকে বৈধতা দেয় না। )
- বাঙলাদেশে মেয়েরা পথে ঘাটে চলতে গেলে নানাধরণের যৌন নির্যাতনের শিকার হয়।
- কিন্তু ভারতে তো মেয়েদেরকে রাস্তায় সরাসরি গ্যাং রেইপ করা হয়। এই সেইদিনও দিল্লীতে একটি মেয়ে গণধর্ষণের শিকার হলো। সেই সাথে, বিএনপি সরকারের আমলেও তো এগুলো হতো। আপনার প্রেক্ষাপট, পরিপ্রেক্ষিত বুঝতে হবে। আমার দল এগুলো চালু করে নি। এটি দেশে আগে থেকেই প্রচলিত ছিল। তৎকালীন বিএনপি জামাতের সময়ে ঘরে ঢুকে মেয়েদের ধর্ষণ করা হতো। কিন্তু আমার দল ক্ষমতায় আসার পরে ঘরে ঢুকে আর ধর্ষণ করা হয় না। মেয়েরা বাইরে গেলে একটু আধটু করা হয়। তাই বলা যায়, বাঙলাদেশে কোন নারীর ওপর যৌন নির্যাতন হয় না। আর যেটা করা হয়, তা খারাপ কিছু না।
- ( কিন্তু অন্য দেশে ধর্ষণ হয়, বা আগের আমলে ধর্ষণ হতো, এগুলো তো এটি প্রমাণ করে না যে, এখনকার সময়ে যৌন নির্যাতন হয় না। )
- খ্রিস্ট ধর্মে নারীর সম্পর্কে অসম্মানজনক বক্তব্য রয়েছে। বাইবেলের নতুন নিয়ম তিমথি ১ অধ্যায় ২ এর ১১,১২ তে বলা হয়েছে, ” ১১. নারীরা সম্পূর্ণ বশ্যতাপূর্বক নীরবে নতনম্র হয়ে শিক্ষা গ্রহণ করুক৷ ১২. আমি কোন নারীকে শিক্ষা দিতে অথবা কোন পুরুষের ওপরে কর্তৃত্ত্ব করতে দিই না; বরং নারী নীরব থাকুক৷”
- কিন্তু হিন্দুদের ধর্মে তো আরো খারাপ কথা বলা হয়েছে। হিন্দু ধর্মে নারীদের স্বামীর দাসী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি বিক্রি করে দেয়ার কথাও বলা আছে। আপনার সেই সময়ের প্রেক্ষাপট, পরিপ্রেক্ষিত বুঝতে হবে। আমার ধর্ম এগুলো চালু করে নি। এগুলো সমাজে আগে থেকেই প্রচলিত ছিল। তৎকালীন পৌত্তলিক ধর্মের অনুসারীরা মেয়েদের কোন অধিকারই দিতো না। কিন্তু যীশু আসার পরে মেয়েরা পেয়েছে সর্বোচ্চ সম্মান। তার মানে, খ্রিস্ট ধর্মে আসলে নারীকে অনেক সম্মান দেয়া হয়েছে।-
- ( কিন্তু অন্য ধর্মে নারীর প্রতি অসম্মানজনক বক্তব্য রয়েছে, বা আগের আমলে মেয়েদের অধিকার ছিল না, এগুলো তো এটি প্রমাণ করে না যে, খ্রিস্ট ধর্ম নারীকে সম্মান দিয়েছে! বা বাইবেলের ঐ আয়াতটি খুব ভাল আয়াত!)
- আপনার ধর্মে(একটি কাল্পনিক ধর্মে) ধর্ষণকে বৈধতা দেয়া হয়েছে কেন?
- কিন্তু অমুক ধর্মে তো আরো বাজে কথা বলা আছে। সেই সময়ের প্রেক্ষাপট, পরিপ্রেক্ষিত আপনার বুঝতে হবে। আমার ধর্ম ধর্ষণ চালু করে নি। এটি সমাজে আগে থেকেই প্রচলিত ছিল। তৎকালীন বর্বর সমাজে খুব অত্যাচার করে ধর্ষণ করা হতো। মারপিট করা হতো, অনেক সময় হাত পা কেটে নেয়া হতো। ধর্ষিতার কোন অধিকারই ছিল না। কিন্তু আমার ধর্ম ধর্ষণ করার পরে ধর্ষিতা নারীকে বিরিয়ানী খাওয়াতে বলেছে। বিরিয়ানীর সাথে হালকা সালাদ এবং বোরহানীও দিতে বলেছে। দেখুন, আমার ধর্ম ধর্ষিতাকে কতটা সম্মান দিয়েছে। এরপরেও নাস্তিকরা বাজে কথা বলবে, জানি। কারণ তারা তো ইহুদিদের থেকে টাকা পায়।
- ( কিন্তু অন্য ধর্মে আরো খারাপ কিছু রয়েছে, বা আগের আমলে আরো খারাপ কিছু ছিল, এগুলো তো এটি প্রমাণ করে না যে, যেই বিষয়ের সমালোচনা হচ্ছে, সেটি ভুল! )
- ইসলামে দাসপ্রথাকে বৈধতা দেয়া হয়েছে।
- সেই সময়ের প্রেক্ষাপট, পরিপ্রেক্ষিত আপনার বুঝতে হবে। ইসলাম ধর্ম দাসপ্রথা চালু করে নি। এটি সমাজে আগে থেকেই প্রচলিত ছিল। ইসলাম শুধু তাকে বৈধতা দিয়েছে। তৎকালীন বর্বর আইয়্যামে জাহিলিয়াতের সময়ে সমাজে দাসদের খুব অত্যাচার করা হতো। মারপিট করা হতো, অনেক সময় হাত পা কেটে নেয়া হতো। দাসদের কোন অধিকারই ছিল না। কিন্তু আমার ধর্ম দাসদেরকে নান্নার কাচ্চি বিরিয়ানী খাওয়াতে বলেছে। বিনিময়ে ইসলামে মালিকেরা দাসীদের সাথে যৌনকর্ম করতে পারে, এই বিধান করা হয়েছে। দেখুন, আমার ধর্ম দাসদাসীদের কতটা সম্মান দিয়েছে। এরপরেও নাস্তিকরা বাজে কথা বলবে, জানি। কারণ তারা তো ইহুদিদের থেকে টাকা পায়। তাই বলা যায়, দাসপ্রথা খারাপ কিছু নয়। ইসলামই দাসদের দিয়েছে সর্বোচ্চ সম্মান। সুতরাং ইসলামী দাসপ্রথা খুবই ভাল ব্যবস্থা এবং আবারো সারা পৃথিবীতে ইসলামি দাসপ্রথা চালু করা উচিত।
- ( কিন্তু অন্য ধর্মে আরো খারাপ কিছু রয়েছে, বা আগের আমলে আরো খারাপ কিছু ছিল, এগুলো তো এটি প্রমাণ করে না যে, যেই বিষয়ের সমালোচনা হচ্ছে, সেটি ভুল! দাসপ্রথা মানব ইতিহাসে সবচাইতে ভয়ঙ্কর অপরাধ। মানবতার সাথে অন্যায়। মানুষের অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ মৌলিক অধিকার হচ্ছে, স্বাধীনভাবে জীবনযাপনের অধিকার। দাসপ্রথা দাসের একদম মৌলিক একটি অধিকার, স্বাধীনতাকে হরণ করে। তাকে একটি সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করে। মালিক চাইলে তাকে বিক্রি করতে পারে, মালিক চাইলে তাকে যেকোন কাজ করাতে পারে! শুধু তাই নয়, তাকে যেভাবে ইচ্ছা ব্যবহারও করতে পারে। এরকম ভয়াবহ ব্যাপারকে বৈধতা দেয়া অবজেকটিভলি খুব বড় অনৈতিক কাজ। )