নবী মুহাম্মদের যখন ক্ষমতা কম ছিল, অস্ত্র এবং লোকবল কম ছিল, তিনি ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন। আর যখনই ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়েছেন, যুদ্ধ এবং কতল করার মত লোকজন যোগার হয়ে গেছে, নবির নির্দেশে মুসলিমরা পৌত্তলিকদের মূর্তি এবং মন্দির ধ্বংস করে দিতো। যাদের সাথে নবীর কোন যুদ্ধ বা শত্রুতা কিছুই ছিল না, তাদেরকেও কোন কারণ ছাড়াই শুধুমাত্র ত্রাস সৃষ্টির উদ্দেশ্যে, এবং তারা মূর্তি পুজা করে এই অপরাধে হত্যা করার নির্দেশ দিতেন নবী। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, নবী বলেছেন যে, মানুষ যে পর্যন্ত না “আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত আর কোন প্ৰভু নেই” এই কথার স্বীকৃতি দিবে সেই পর্যন্ত আমি(নবী) তাদের বিরুদ্ধে কিতাল বা সশস্ত্র যুদ্ধ করতে আদিষ্ট হয়েছি [1] [2] –
সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
৩৮/ ঈমান
পরিচ্ছেদঃ ১. যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ “লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ না বলবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কিতাল করতে আমি আদেশপ্রাপ্ত হয়েছি
২৬০৭। আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মৃত্যুর পর আবূ বকর (রাযিঃ) যখন খলীফা নির্বাচিত হন, তখন আরবের কিছু সংখ্যক লোক কাফির হয়ে যায়। উমার ইবনুল খাত্তাব (রাযিঃ) আবূ বাকর (রাযিঃ)-কে বললেন, আপনি এদের বিরুদ্ধে কিভাবে অস্ত্ৰধারণ করবেন, অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষ যে পর্যন্ত না “আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত আর কোন প্ৰভু নেই” এই কথার স্বীকৃতি দিবে সেই পর্যন্ত আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আদিষ্ট হয়েছি। আর যে ব্যক্তি বললো, “আল্লাহ ব্যতীত আর কোন প্ৰভু নেই” সে আমার থেকে তার মাল ও রক্ত (জীবন) নিরাপদ করে নিল। তবে ইসলামের অধিকার সম্পর্কে ভিন্ন কথা। আর তাদের প্রকৃত হিসাব-নিকাশ রয়েছে আল্লাহ তা’আলার দায়িত্বে।
আবূ বকর (রাযিঃ) বললেনঃ আল্লাহর শপথ নামায ও যাকাতের মধ্যে যে ব্যক্তি পার্থক্য করে আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবোই। কেননা যাকাত সম্পদের হাক্ক। কেউ উটের একটি রশি দিতেও যদি অস্বীকার করে, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দিত, আল্লাহর কসম! আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবোই। তারপর উমার ইবনুল খাত্তাব (রাযিঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি দেখতে পেলাম আল্লাহ যেন যুদ্ধের জন্য আবূ বাকরের অন্তর উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। অতঃপর আমি বুঝতে পারলাম যে, তার সিদ্ধান্তই যথার্থ।
সহীহঃ সহীহাহ (৪০৭), সহীহ আবূ দাউদ (১৩৯১-১৩৯৩), বুখারী ও মুসলিম।
আবূ ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ। শু’আইব ইবনু আবী হামযা (রহঃ) যুহরী হতে, তিনি উবাইদুল্লাহ ইবনু আবদিল্লাহ হতে, তিনি আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ)-এর সূত্রে একই রকম বর্ণনা করেছেন। এই হাদীস মামার-যুহরী হতে, তিনি আনাস (রাযিঃ) হতে, তিনি আবূ বাকর (রাযিঃ) হতে এই সূত্রে ইমরান আল-কাত্তান বর্ণনা করেছেন। এ বর্ণনাটি ভুল। ‘ইমরানের ব্যাপারে মা’মার হতে বর্ণিত বর্ণনাতে বিরোধিতা করা হয়েছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
৩৮/ ঈমান
পরিচ্ছেদঃ ২. আমি লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আদিষ্ট হয়েছি যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা “লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ বলবে এবং নামায আদায় করবে
২৬০৮। আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত আর কোন প্ৰভু নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহ তা’আলার বান্দা ও তার রাসূল এবং আমাদের কিবলামুখী হয়ে নামায আদায় করবে, আমাদের যবেহকৃত পশুর গোশত খাবে এবং আমাদের মতো নামায আদায় করবে। তারা এগুলো করলে তাদের জান ও মালে হস্তক্ষেপ করা আমাদের জন্য হারাম হয়ে যাবে। কিন্তু ইসলামের অধিকারের বিষয়টি ভিন্ন। মুসলিমদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা তারাও পাবে এবং মুসলিমদের উপর অর্পিত দায়-দায়িত্ব তাদের উপরও বর্তাবে।
সহীহঃ সহীহাহ (৩০৩) ও (১/১৫২), সহীহ আবূ দাউদ (২৩৭৪), বুখারী অনুরূপ।
মুআয ইবনু জাবাল ও আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবূ ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ এবং উপরোক্ত সূত্রে গারীব। ইয়াহইয়া (রাহঃ) হুমাইদ হতে, তিনি আনাস (রাযিঃ)-এর সূত্রে একই রকম হাদীস বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
নিচের হাদিসটি পড়ুন। ইসলামে কাফেরদের বাসভবনে অতর্কিত আক্রমণ সম্পূর্ণ বৈধ, একইসাথে তাদের বাড়িঘরে আক্রমণ করে তাদের নারী শিশুদের বন্দী করাও ইসলামে সম্পূর্ণ জায়েজ। এগুলো ইসলামের খুব পরিষ্কার বিধান, যদিও আমাদের দেশের মোল্লারা ওয়াজ মাহফিলে এসব হাদিস ভুলেও উচ্চারণ করেন না। কারণ এসব হাদিস বললে জঙ্গিবাদের দায়ে জেল জরিমানা হয়ে যাবে [3] [4] –
সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৩৩/ জিহাদ ও এর নীতিমালা
পরিচ্ছেদঃ ১. যে সকল বিধর্মীর কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছেছে, পূর্ব ঘোষণা ব্যতীত তাদের বিরুদ্ধে আক্রমন পরিচালনা বৈধ
৪৩৭০। ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া তামীমী (রহঃ) … ইবনু আউন (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বললেন, আমি নাফি’ (রহঃ) কে এই কথা জানতে চেয়ে পত্র লিখলাম যে, যুদ্ধের পূর্বে বিধর্মীদের প্রতি দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া প্রয়োজন কি না? তিনি বলেন, তখন তিনি আমাকে লিখলেন যে, এ (নিয়ম) ইসলামের প্রারম্ভিক যুগে ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনূ মুসতালিকের উপর আক্রমণ করলেন এমতাবস্থায় যে, তারা অপ্রস্তুত ছিল (তা জানতে পারেনি।) তাদের পশুদের পানি পান করানো হচ্ছিল। তখন তিনি তাদের যোদ্ধাদের (পূর্ণ বয়স্ক পুরুষ) হত্যা করলেন এবং অবশিষ্টদের (নারী শিশুদের) বন্দী করলেন। আর সেই দিনেই তাঁর হস্তগত হয়েছিল। (ইয়াহইয়া বলেন যে, আমার ধারণা হল, তিনি বলেছেন) জুওয়ায়রিয়া অথবা তিনি নিশ্চিতরূপে ইবনাতুল হারিছ (হারিছ কন্যা) বলেছিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, এই হাদীস আমাকে আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। তিনি সেই সেনাদলে ছিলেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ ইবনু ‘আউন (রহঃ)
![12.বিনা কারণে আক্রমণাত্মক জিহাদ 1 অতর্কিত আক্রমণ](https://imagedelivery.net/f1WB4tcfMJdoXc_M7eEHYg/www.shongshoy.com/2019/09/mHXyhQn.jpg/w=9999)
এবারে আসুন তাহাবী শরীফ থেকে একটি হাদিস পড়ে নেয়া যাক, যেখানে দেখা যাচ্ছে, যেহেতু বর্তমানে সকলের কাছেই ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে গেছে, তাই আবারো ইসলামের পথে আহবান জানাবার আর কোন বিশেষ প্রয়োজন নেই। আক্রমনাত্মক জিহাদ বা অতর্কিত আক্রমণ চালালে সেটি সম্পূর্ণ জায়েজ [5] –
![12.বিনা কারণে আক্রমণাত্মক জিহাদ 2](https://i0.wp.com/www.shongshoy.com/wp-content/uploads/2024/04/image-4.png?resize=768%2C1024&ssl=1)
ইয়ামেনের অন্তর্গত একটি জায়গায় পৌত্তলিকদের একটি তীর্থস্থান ছিল, যার নাম যুল খালাসা। সেটি যোদ্ধা পাঠিয়ে নবী সেটি ধ্বংস করতে হুকুম দেন। এরকম ঘটনা অনেকগুলো, এখানে উল্লখযোগ্য কিছু ঘটনার বিবরণ দেয়া হচ্ছে। এই সম্পর্কে প্রখ্যাত স্কলার আল্লামা ইবনে কাসীরের আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থে বলা আছে, নবী মুহাম্মদ এই তীর্থস্থানটি ধ্বংসের নির্দেশ দেন, যার একমাত্র কারণ ছিল তাদের মূর্তি পূজা [6] –
![12.বিনা কারণে আক্রমণাত্মক জিহাদ 3 যুল খালাসা ধ্বংস](https://imagedelivery.net/f1WB4tcfMJdoXc_M7eEHYg/www.shongshoy.com/2020/03/zul-khulasa-scaled.jpg/w=9999)
উল্লেখ্য, যে সকল জায়গাতে লোক পাঠিয়ে মন্দির ধ্বংস এবং মানুষ হত্যার হুকুম নবী দিতেন, তাদের কারোর সাথে মুসলিমদের কোন রকম শত্রুতা ছিল না। আক্রমণাত্মক জিহাদের আয়াত নাজিলের পরেই শুরু হয়ে যায় সর্বাত্মক যুদ্ধ। যারাই ইসলাম কবুল না করবে কিংবা জিজিয়া না দিবে, তাদেরই কতল। আর মুশরিকদের কাছ থেকে তো ইসলাম ছাড়া কিছুই গ্রহণ করা হবে না, যা আগেই বলা হয়েছে। সহিহ বুখারী হাদিস গ্রন্থ থেকে যুল খালাসা গোত্রের ওপর আক্রমণের বিষয়ের সত্যতা পরিষ্কার হয়ে যায় [7] [8] [9] [10] [11] [12] [13] –
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪৮/ জিহাদ
পরিচ্ছেদঃ ১৮৯৫. ঘরবাড়ী ও খেজুর বাগান জ্বালিয়ে দেওয়া
২৮১১। মুসাদ্দাদ (রহঃ) … জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তুমি কি আমাকে যিলখালাসার ব্যাপারে শাস্তি দিবে না? খাশআম গোত্রে একটি মূর্তি ঘর ছিল। যাকে ইয়ামানের কাবা নামে আখ্যায়িত করা হত। জারীর (রাঃ) বলেন, তখন আমি আহমাসের দেড়শ’ আশ্বরোহী সাথে নিয়ে রওনা করলাম। তারা নিপুন অশ্বারোহী ছিল। জারীর (রাঃ) বলেন, আর আমি অশ্বের উপর স্থির থাকতে পারতাম না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বুকে এমনভাবে আঘাত করলেন যে, আমি আমার বুকে তাঁর আঙ্গুলীর চিহৃ দেখতে পেলাম এবং তিনি আমার জন্য এ দোয়া করলেন যে, ‘হে আল্লাহ! তাকে স্থির রাখুন এবং হেদায়েত প্রাপ্ত, পথ প্রদর্শনকারী করুন।’
তারপর জারীর (রাঃ) সেখানে গমন করেন এবং যুলখালাসা মন্দির ভেঙ্গে ফেলে ও জ্বালিয়ে দেন। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ সংবাদ নিয়ে এক ব্যক্তিকে তাঁর নিকট প্রেরণ করেন। তখন জারীর (রাঃ)-এর দূত বলতে লাগল, কসম সে মহান আল্লাহ তা‘আলার! যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, আমি আপনার নিকট তখনই এসেছি যখনই যুলখালাসাকে আমরা ধংস করে দিয়েছি। জারীর (রাঃ) বলেন, তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহমাসের অশ্ব ও অশ্বারোহীদের জন্য পাচঁবার বরকতের দু‘আ করেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ জারীর ইবনু আবদুল্লাহ আল বাজলী (রাঃ)
সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ)
পরিচ্ছদঃ ২১৩১. জারীর ইবন আবদুল্লাহ বাজালী (রাঃ) এর আলোচনা
৩৫৪৯। ইসহাক আল ওয়াসিতী (রহঃ) … জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইসলাম গ্রহণ করার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর গৃহে প্রবেশ করতে কোনদিন আমাকে বাঁধা প্রদান করেন নি এবং যখনই আমাকে দেখেছেন মুচকি হাসি দিয়েছেন। জারীর (রাঃ) আরো বলেন, জাহিলী যুগে (খাস’আম গোত্রের একটি প্রতীমা রক্ষিত মন্দির) যুল-খালাসা নামে একটি ঘর ছিল। যাকে কা’বায়ে ইয়ামানী ও কা’বায়ে শামী বলা হত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, তুমি কি যুল-খালাসার ব্যাপারে আমাকে শান্তি দিতে পার? জারীর (রাঃ) বলেন, আমি আহমাস গোত্রের একশ পঞ্চাশ জন অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে যাত্রা করলাম এবং (প্রতীমা ঘরটি) বিধ্বস্ত করে দিলাম। সেখানে যাদেরকে পেলাম হত্যা করে ফেললাম। ফিরে এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সংবাদ শোনালাম। তিনি (অত্যন্ত খুশী হয়ে) আমাদের জন্য এবং আহমাস গোত্রের জন্য দু’আ করলেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
![যুল খালাসা - এক তীর্থস্থানের ধ্বংসের ইতিহাস যুল খালাসা বুখারী ৩৫৪৯](https://imagedelivery.net/f1WB4tcfMJdoXc_M7eEHYg/www.shongshoy.com/2020/03/zul-khalasa-hadith.jpg/w=9999)
সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫১/ মাগাযী (যুদ্ধাভিযান)
পরিচ্ছদঃ ২২২৬. যুল খালাসার যুদ্ধ
৪০১৮। ইউসুফ ইবনু মূসা (রহঃ) … জারীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি আমাকে যুল-খালাসার পেরেশানী থেকে স্বস্থি দেবেনা? আমি বললামঃ অবশ্যই। এরপর আমি (আমাদের) আহমাস গোত্র থেকে একশত পঞ্চাশ জন অশ্বারোহী সৈনিক নিয়ে চললাম। তাদের সবাই ছিলো অশ্ব পরিচালনায় অভিজ্ঞ। কিন্তু আমি তখনো ঘোড়ার উপর স্থির হয়ে বসতে পারতাম না। তাই ব্যাপারটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জানালাম। তিনি তাঁর হাত দিয়ে আমার বুকের উপর আঘাত করলেন।
এমনকি আমি আমার বুকে তাঁর হাতের চিহ্ন পর্যন্ত দেখতে পেলাম। তিনি দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ্! একে স্থির হয়ে বসে থাকতে দিন এবং তাকে হেদায়েত দানকারী ও হেদায়েত লাভকারী বানিয়ে দিন’। জারীর (রাঃ) বলেন, এরপরে আর কখনো আমি আমার ঘোড়া থেকে পড়ে যাইনি। তিনি আরো বলেছেন যে, যুল-খালাসা ছিলো ইয়ামানের অন্তর্গত খাসআম ও বাজীলা গোত্রের একটি (তীর্থ) ঘর। সেখানে কতগুলো মূর্তি স্থাপিত ছিলো। লোকেরা এগুলোর পূজা করত এবং এ ঘরটিকে বলা হতো কা’বা।
রাবী বলেন, এরপর তিনি সেখানে গেলেন এবং ঘরটি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিলেন আর এর ভিটামাটিও চুরমার করে দিলেন। রাবী আরো বলেন, আর যখন জারীর (রাঃ) ইয়ামানে গিয়ে উঠলেন তখন সেখানে এক লোক থাকত, সে তীরের সাহায্যে ভাগ্য নির্নয় করত, তাকে বলা হল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতিনিধি এখানে আছেন, তিনি যদি তোমাকে পাকড়াও করার সুযোগ পান তাহলে তোমার গর্দান উড়িয়ে দেবেন।
রাবী বলেন, এরপর একদা সে ভাগ্য নির্নয়ের কাজে লিপ্ত ছিল, সেই মূহুর্তে জারীর (রাঃ) সেখানে পৌঁছে গেলেন। তিনি বললেন, তীরগুলো ভেঙ্গে ফেল এবং আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই- এ কথার সাক্ষ্য দাও, অন্যথায় তোমার গর্দান উড়িয়ে দেব। লোকটি তখন তীরগুলো ভেঙ্গে ফেলল এবং (আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, এ কথার) সাক্ষ্য দিল। এরপর জারীর (রাঃ) আবূ আরতাত নামক আহমাস গোত্রের এক ব্যক্তিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেদমতে পাঠালেন খোশখবরী শোনানোর জন্য। লোকটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, ‘‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে সত্তার (আল্লাহর) কসম করে বলছি, যিনি আপনাকে সত্য বাণী দিয়ে পাঠিয়েছেন, ঘরটিকে ঠিক খুজলি-পাঁচড়া আক্রান্ত উটের মতো কালো করে রেখে আমি এসেছি। বর্ণনাকারী বলেন, এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহমাস গোত্রের অশ্বারোহী এবং পদাতিক সৈনিকদের সার্বিক কল্যাণ ও বরকতের জন্য পাঁচবার দোয়া করলেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫১/ মাগাযী (যুদ্ধাভিযান)
পরিচ্ছদঃ ২২২৬. যুল খালাসার যুদ্ধ
৪০১৭। মুহাম্মাদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) … কায়স (রহঃ) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, জারীর (রাঃ) আমাকে বলেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, তুমি কি আমাকে যুল-খালাসা থেকে স্বস্থি দেবে না? যুল-খালাসা ছিল খাসআম গোত্রের একটি (বানোয়াট তীর্থ) ঘর, যাকে বলা হত ইয়ামনী কা’বা। এ কথা শুনে আমি আহমাস্ গোত্র থেকে একশত পঞ্চাশজন অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে চললাম। তাঁদের সকলেই অশ্ব পরিচালনায় পারদর্শী ছিল। আর আমি তখন ঘোড়ার পিঠে শক্তভাবে বসতে পারছিলাম না। কাজেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বুকের উপর হাত দিয়ে আঘাত করলেন। এমন কি আমার বুকের উপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র আঙ্গুলগুলোর ছাপ পর্যন্ত দেখতে পেলাম।
(এ অবস্থায়) তিনি দোয়া করলেন, হে আল্লাহ্! একে (ঘোড়ার পিঠে) শক্তভাবে বসে থাকতে দিন এবং তাকে হেদায়েত দানকারী ও হেদায়েত লাভকারী বানিয়ে দিন। এরপর জারীর (রাঃ) সেখানে গেলেন এবং ঘরটি ভেঙ্গে দিয়ে তা জ্বালিয়ে ফেললেন। এরপর তিনি (জারীর (রাঃ)) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে দূত পাঠালেন। তখন জারীর (রাঃ) এর দূত (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে) বলল, সেই মহান সত্তার শপথ, যিনি আপনাকে সত্য বাণী সহকারে পাঠিয়েছেন, আমি ঘরটিকে খুজলি-পাঁচড়া আক্রান্ত কালো উঠের মত রেখে আপনার কাছে এসেছি। রাবী বলেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহমাস গোত্রের অশ্বারোহী ও পদাতিক সৈনিকদের জন্য পাঁচবার বরকতের দোয়া করলেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৬৪/ মাগাযী (যুদ্ধ)
পরিচ্ছদঃ ৬৪/৬৩. যুল খালাসার যুদ্ধ।
৪৩৫৬. ক্বায়স (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জারীর (রাঃ) থেকে আমাকে বলেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, তুমি কি আমাকে যুল খালাসা থেকে স্বস্তি দেবে না? যুল খালাসা ছিল খাসআম গোত্রের একটি ঘর, যার নাম দেয়া হয়েছিল ইয়ামানী কা‘বা। এ কথা শুনে আমি আহ্মাস গোত্র থেকে একশ’ পঞ্চাশ জন অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে চললাম। তাঁদের সকলেই অশ্ব পরিচালনায় পারদর্শী ছিল। আর আমি তখন ঘোড়ার পিঠে স্থিরভাবে বসতে পারছিলাম না। কাজেই নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বুকের উপর হাত দিয়ে আঘাত করলেন। এমন কি আমি আমার বুকের উপর তার আঙ্গুলগুলোর ছাপ পর্যন্ত দেখতে পেলাম। তিনি দু‘আ করলেন, হে আল্লাহ! একে স্থির রাখুন এবং তাকে হিদায়াত দানকারী ও হিদায়াত লাভকারী বানিয়ে দিন। এরপর জারীর (রাঃ) সেখানে গেলেন এবং ঘরটি ভেঙ্গে দিলেন আর তা জ্বালিয়ে দিলেন। এরপর তিনি (জারীর (রাঃ)) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে দূত পাঠালেন। তখন জারীরের দূত (রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে) বলল, সেই মহান সত্তার শপথ! যিনি আপনাকে সত্য বাণী দিয়ে পাঠিয়েছেন, আমি ঘরটিকে চর্মরোগে আক্রান্ত কাল উটের মতো রেখে আপনার কাছে এসেছি। রাবী বলেন, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহমাস গোত্রের অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনীর জন্য পাঁচবার বারাকাতের দু‘আ করলেন। (৩০২০) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪০১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪০১৪)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
![যুল খালাসা - এক তীর্থস্থানের ধ্বংসের ইতিহাস যুল খালাসা বুখারী ৪০১৬](https://imagedelivery.net/f1WB4tcfMJdoXc_M7eEHYg/www.shongshoy.com/2020/03/zul-khalasa-bukhari.jpg/w=9999)
![যুল খালাসা - এক তীর্থস্থানের ধ্বংসের ইতিহাস যুল খালাসা বুখারী ৪০১৭](https://imagedelivery.net/f1WB4tcfMJdoXc_M7eEHYg/www.shongshoy.com/2020/03/zul-khalasa-bukhari-2.jpg/w=9999)
![যুল খালাসা - এক তীর্থস্থানের ধ্বংসের ইতিহাস যুল খালাসা বুখারী ৪০১৮](https://imagedelivery.net/f1WB4tcfMJdoXc_M7eEHYg/www.shongshoy.com/2020/03/zul-khalasa-bukhari-3.jpg/w=9999)
উপরে যুল খালাসায় সৈন্য পাঠিয়ে অমুসলিমদের উপাসনালয় এবং পুজনীয় মূর্তি ভাঙ্গার নির্দেশের কথা বলা হয়েছে। এরকম উদাহরণ অনেকগুলোই আছে। আসুন আর-রাহীকুল মাখতূম থেকে পড়ি, সেখানে দেখা যায়, বিভিন্ন স্থানে সৈন্য পাঠিয়ে নবী মূর্তি, উপাসনালয় এবং সেই সব মূর্তির পুজা কারী মানুষদের সমূলে নিশ্চিহ্ন করতেন। এমনকি মহিলাদেরও বাদ দিতেন না। অবস্থা এমন খারাপ হয়েছিল যে, নবী নিজেই খালিদ বিন ওয়ালিদের ওপর এত হত্যাকাণ্ড দেখে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলেন [14] –
বিভিন্ন অভিযান ও প্রতিনিধি প্রেরণঃ
১. মক্কা বিজয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যাবতীয় কাজকর্ম সুসম্পন্ন করার পর যখন তিনি কিছুটা অবকাশ লাভ করলেন তখন ৮ম হিজরীর ২৫ রমযান উযযা নামক দেব মূর্তি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ)-এর নেতৃত্বে একটি ছোট সৈন্যদল প্রেরণ করলেন। উযযা মূর্তির মন্দিরটি ছিল নাখলা নামক স্থানে। এটি ভেঙ্গে ফেলে খালিদ (রাঃ) প্রত্যাবর্তন করলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, (هَلْ رَأَيْتَ شَيْئًا؟)‘তুমি কি কিছু দেখেছিলে?’ খালিদ (রাঃ) বললেন, ‘না’ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করলেন, (فَإِنَّكَ لَمْ تَهْدِمْهَا فَارْجِعْ إِلَيْهَا فَاهْدِمْهَا) ‘তাহলে প্রকৃতপক্ষে তুমি তা ভাঙ্গ নি। পুনরায় যাও এবং তা ভেঙ্গে দাও।’ উত্তেজিত খালিদ (রাঃ) কোষমুক্ত তরবারি হস্তে পনুরায় সেখানে গমন করলেন। এবারে বিক্ষিপ্ত ও বিস্ত্রস্ত চুলবিশিষ্ট এক মহিলা তাঁদের দিকে বের হয়ে এল। মন্দির প্রহরী তাকে চিৎকার করে ডাকতে লাগল। কিন্তু এমন সময় খালিদ (রাঃ) তরবারি দ্বারা তাকে এতই জোরে আঘাত করলেন যে, তার দেহ দ্বিখন্ডিত হয়ে গেল। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে তিনি এ সংবাদ অবগত করালে তিনি বললেন, (نَعَمْ، تِلْكَ الْعُزّٰى، وَقَدْ أَيِسَتْ أَنْ تَعْبُدَ فِيْ بِلَادِكُمْ أَبَدًا) ‘হ্যাঁ’, সেটাই ছিল উযযা। এখন তোমাদের দেশে তার পূজা অর্চনার ব্যাপারে সে নিরাশ হয়ে পড়েছে (অর্থাৎ কোন দিন তার আর পূজা অর্চনা হবে না)।
২. এরপর নাবী কারীম (সাঃ) সে মাসেই ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ)-কে ‘সুওয়া’ নামক দেবমূর্তি ভাঙ্গার জন্য প্রেরণ করেন। এ মূর্তিটি ছিল মক্কা হতে তিন মাইল দূরত্বে ‘রিহাত’ নামক স্থানে বনু হুযাইলের একটি দেবমূর্তি। ‘আমর যখন সেখানে গিয়ে পৌঁছেন তখন প্রহরী জিজ্ঞেস করল, ‘তোমরা কী চাও?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর নাবী (সাঃ) এ মূর্তি ভেঙ্গে ফেলার জন্য আমাদের নির্দেশ প্রদান করেছেন।’
সে বলল, ‘তোমরা এ মূর্তি ভেঙ্গে ফেলতে পারবে না।’
‘আমর (রাঃ) বললেন, ‘কেন?’
সে বলল, ‘প্রাকৃতিক নিয়মেই তোমরা বাধাপ্রাপ্ত হবে।’
‘আমর (রাঃ) বললেন, ‘তোমরা এখনও বাতিলের উপর রয়েছ? তোমাদের উপর দুঃখ, এই মূর্তিটি কি দেখে কিংবা শোনে?’
অতঃপর মূর্তিটির নিকট গিয়ে তিনি তা ভেঙ্গে ফেললেন এবং সঙ্গীসাথীদের নির্দেশ প্রদান করলেন ধন ভান্ডার গৃহটি ভেঙ্গে ফেলতে। কিন্তু ধন-ভান্ডার থেকে কিছুই পাওয়া গেল না। অতঃপর তিনি প্রহরীকে বললেন, ‘বল, কেমন হল?’
সে বলল, ‘আল্লাহর দ্বীন ইসলাম আমি গ্রহণ করলাম।’
৩. এ মাসেই সা‘দ বিন যায়দ আশহালী (রাঃ)-এর নেতৃত্বে বিশ জন ঘোড়সওয়ার সৈন্য প্রেরণ করেন মানাত দেবমূর্তি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে। কুদাইদের নিকট মুশাল্লাল নামক স্থানে আওস, খাযরাজ, গাসসান এবং অন্যান্য গোত্রের উপাস্য ছিল এ ‘মানত’ মূর্তি। সা‘দ (রাঃ)-এর বাহিনী যখন সেখানে গিয়ে পৌঁছেন তখন মন্দিরের প্রহরী বলল, ‘তোমরা কী চাও?’
তাঁরা বললেন, ‘মানাত দেবমূর্তি ভেঙ্গে ফেলার উদ্দেশ্যে আমরা এখানে এসেছি।’
সে বলল, ‘তোমরা জান এবং তোমাদের কার্য জানে।’
সা‘দ মানাত মূর্তির দিকে অগ্রসর হতে গিয়ে একজন উলঙ্গ কালো ও বিক্ষিপ্ত চুল বিশিষ্ট মহিলাকে বেরিয়ে আসতে দেখতে পেলেন। সে আপন বক্ষদেশ চাপড়াতে চাপড়াতে হায়! রব উচ্চারণ করছিল।
প্রহরী তাকে লক্ষ্য করে বলল, ‘মানাত! তুমি এ অবাধ্যদের ধ্বংস কর।’
কিন্তু এমন সময় সা‘দ তরবারির আঘাতে তাকে হত্যা করলেন। অতঃপর মূর্তিটি ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে দিলেন। ধন-ভান্ডারে ধন-দৌলত কিছুই পাওয়া যায় নি।
৪. উযযা নামক দেবমূর্তিটি ভেঙ্গে ফেলার পর খালিদ বিন ওয়ালীদ (সাঃ) প্রত্যাবর্তন করলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ৮ম হিজরী শাওয়াল মাসেই বনু জাযামাহ গোত্রের নিকট তাঁকে প্রেরণ করেন। উদ্দেশ্য ছিল আক্রমণ না করে ইসলাম প্রচার। খালিদ (রাঃ) মুহাজির, আনসার এবং বনু সুলাইম গোত্রের সাড়ে তিনশ লোকজনসহ বনু জাযীমাহর নিকট গিয়ে ইসলামের দাওয়াত পেশ করেন। তারা (ইসলাম গ্রহণ করেছি) বলার পরিবর্তে (আমরা স্বধর্ম ত্যাগ করেছি, আমরা স্বধর্ম ত্যাগ করেছি) বলল। এ কারণে খালিদ (রাঃ) তাদের হত্যা এবং বন্দী করতে আদেশ দিলেন। তিনি সঙ্গী সাথীদের এক একজনের হস্তে এক এক জন বন্দীকে সমর্পণ করলেন। অতঃপর এ বলে নির্দেশ প্রদান করলেন যে, ‘প্রত্যেক ব্যক্তি তাঁর নিকটে সমর্পিত বন্দীকে হত্যা করবে। কিন্তু ইবনু উমার এবং তাঁর সঙ্গীগণ এ নির্দেশ পালনে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করলেন। অতঃপর যখন নাবী কারীম (সাঃ)-এর খিদমতে উপস্থিত হলেন তখন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলেন। তিনি দু’ হাত উত্তোলন করে দু’বার বললেন, (اللهم إِنِّيْ أَبْرَأُ إِلَيْكَ مِمَّا صَنَعَ خَالِدًا) ‘হে আল্লাহ! খালিদ যা করেছে আমি তা হতে তোমার নিকটে নিজেকে পবিত্র বলে ঘোষণা করছি।’(1)
এ পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র বনু সুলাইম গোত্রের লোকজনই নিজ বন্দীদের হত্যা করেছিল। আনসার ও মহাজিরীনগণ হত্যা করেন নি। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আলী (রাঃ)-কে প্রেরণ করে তাদের নিহত ব্যক্তিদের শোণিত খেসারত এবং ক্ষতিপূরণ প্রদান করেন। এ ব্যাপারটিকে কেন্দ্র করে খালিদ (রাঃ) ও আব্দুর রহমান বিন আওফ (রাঃ)-এর মাঝে কিছু উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় এবং সম্পর্কের অবণতি হয়েছিল। এ সংবাদ অবগত হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন,
(مَهَلًّا يَا خَالِدُ، دَعْ عَنْكَ أَصْحَابِيْ، فَوَاللهِ لَوْ كَانَ أَحَدٌ ذَهَبًا، ثُمَّ أَنْفَقَتْهُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ مَا أَدْرَكَتْ غُدْوَةَ رَجُلٍ مِّنْ أَصْحَابِيْ وَلَا رَوْحَتَهُ)
‘খালিদ থেমে যাও, আমার সহচরদের কিছু বলা হতে বিরত থাক। আল্লাহর কসম! যদি উহুদ পাহাড় সোনা হয়ে যায় এবং তার সমস্তই তোমরা আল্লাহর পথে খরচ করে দাও তবুও আমার সাহাবাদের মধ্য হতে কোন এক জনেরও এক সকাল কিংবা এক সন্ধ্যার ইবাদতের নেকী অর্জন করতে পারবে না।(2)
![12.বিনা কারণে আক্রমণাত্মক জিহাদ 5 4](https://imagedelivery.net/f1WB4tcfMJdoXc_M7eEHYg/www.shongshoy.com/2020/12/Screenshot-from-2020-12-22-08-47-05.jpg/w=9999)
![12.বিনা কারণে আক্রমণাত্মক জিহাদ 7 6](https://imagedelivery.net/f1WB4tcfMJdoXc_M7eEHYg/www.shongshoy.com/2020/12/Screenshot-from-2020-12-22-08-47-30.jpg/w=9999)
শুধু এইটুকুতেই শেষ নয়। আলীর প্রতি এবং পরবর্তীদের প্রতি নবীর নির্দেশও আমরা দেখে নিই [15] –
সূনান তিরমিজী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১০/ কাফন-দাফন
পরিচ্ছেদঃ কবর সমান করে দেওয়া।
১০৪৯. মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) ….. আবূ ওয়াইল (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু আবূল- হায়্যাজ আল-আসা’দী (রহঃ) কে বলেছিলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে যে দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করেছিলেন, আমি তোমাকেও সেই দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করছি। তা হলো, কোন উঁচু কবরকে (মাটি) সমান করা ব্যতীত ছাড়বেনা, আর কোন প্রতিকৃতি বিধ্বংস করা ব্যতীত ছাড়বে না। – আল আহকাম ২০৭, ইরওয়া ৭৫৯, তাহযীরুস সাজিদ ১৩০, মুসলিম, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ১০৪৯ [আল মাদানী প্রকাশনী]
এই বিষয়ে জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকেও হাদীস বর্ণিত রয়েছে। ইমাম আবূ ঈসা (রহঃ) বলেন, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীসটি হাসান। কোন কোন আলিম এতদনুসারে আমল করেছেন। তারা যমীনের উপর কবর উচূঁ করে বাঁধা অপছন্দনীয় বলে মনে করেন। ইমাম শাফিঈ (রহঃ) বলেন, যতটুকু উঁচু করলে এটিকে কবর বলে চিনা যায় তদপেক্ষা কবরকে উঁচু করা আমি পছন্দ করি না। তবে চিহ্নস্বরূপ কিছু উঁচু করার দরকার এই জন্য যে, এটিকে যেন কেউ পদদলিত না করে বা এর উপর যেন কেউ না বসে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ ওয়াইল (রহঃ)
তথ্যসূত্র
- সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), হাদিস নম্বরঃ ২৬০৭ [↑]
- সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), হাদিস নম্বরঃ ২৬০৮ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪৩৭০ [↑]
- সহিহ মুসলিম, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, ষষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৮১, হাদিস নম্বরঃ ৪৩৭০ [↑]
- তাহাবী শরীফ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৩৭ [↑]
- আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬৫৭ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ২৮১১ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩৫৪৯ [↑]
- সহীহ বুখারী, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, পৃষ্ঠা ৩৬৫-৩৬৬, হাদিস নম্বরঃ ৩৫৪৯ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪০১৮ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪০১৭ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, হাদিস নম্বরঃ ৪৩৫৬[↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৮৫-১৮৭ [↑]
- আর-রাহীকুল মাখতূম, আল্লামা সফিউর রহমান মোবারকপুরী (রহঃ), তাওহীদ পাবলিকেশন্স, পৃষ্ঠা ৪৬৬, ৪৬৭ [↑]
- সূনান তিরমিজী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নম্বরঃ ১০৪৯ [↑]