04.কারো বিশ্বাসকে আঘাত করা কি উচিত?

Print Friendly, PDF & Email

আমরা যারা নিজেদের যুক্তিবাদী বলে দাবী করি, তারা সকল ধারণা, সকল বিশ্বাসকেই যুক্তিতর্ক আলাপ আলোচনার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করি, যাচাই বাছাই করে দেখতে চাই। এই সময়ে “বিশ্বাসে আঘাতের” অজুহাত এনে আলাপ আলোচনা এবং যুক্তিতর্ককে খারিজ করে দেয়া শুধু প্রতিক্রিয়াশীলতাই নয়, মানব সমাজের জন্য হুমকিও বটে। সকল বিশ্বাসকেই যদি সম্মান করতে হয়, শ্রদ্ধা করতে হয়, তাহলে মুসলিমদের উচিত হিন্দুদের বিশ্বাসকে শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে গরু কোরবানী না করা। কারণ গরু জবাই দেয়া হিন্দুদের বিশ্বাস অনুসারে মস্তবড় খারাপ কাজ। গরু কোরবানী হতে দেখলে একজন হিন্দুর মনে অনেক আঘাত লাগতে পারে। আবার, মুসলিমদের বিশ্বাসকে সম্মান করে হিন্দুদের উচিত মুর্তি পুজা বন্ধ করে দেয়া। কারণ মূর্তি পুজা দেখলে মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে। কারণ ইসলামে শিরক সর্বোচ্চ অপরাধ হিসেবে স্বীকৃত।

একইভাবে গোলাম আজম বা বাঙলা ভাইয়ের বিশ্বাসকেও শ্রদ্ধা করতে হবে, আবার হিটলারের বিশ্বাসকেও শ্রদ্ধা করতে হবে। সকল বিশ্বাসকে সম্মান করা শুধু বোকামি নয়, বিপদজনকও বটে।আমি কেন তা করবো? তাদের বিশ্বাসকে আমি কেন যাচাই করে দেখবো না? তাদের বিশ্বাসকে আঘাত কেন করবো না? তা যদি মিথ্যা হয়, তাহলে কেন তা যে মিথ্যা তা বলবো না? কেন আমার যুক্তি তুলে ধরবো না? আমি শুধু সেই বিশ্বাসকেই সম্মান জানাবো, যা যুক্তিতর্ক আলাপ আলোচনায় যৌক্তিক বলে প্রতীয়মান হবে। যুক্তিহীন বিশ্বাস মাত্রই ক্ষতিকর এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজের জন্য ভয়ংকর। বিশ্বাস ভিত্তিক সমাজ কুসংস্কারের আখড়ায় পরিণত হয়, মানুষকে ক্রমশ মধ্যযুগে টেনে নিয়ে যায়, যার প্রমাণ বর্তমান বিশ্বের দিকে তাকালেই বোঝা যায়।

আপনি কী আল কায়েদার বিশ্বাসকে সম্মান করবেন? ভারতে গরুর মাংস খাওয়ার অপরাধে জয় শ্রী রাম বলে কিছুদিন আগে কিছু মৌলবাদী হিন্দু এক মুসলিমকে পিটিয়ে মেরে ফেললো। আপনি তাদের বিশ্বাসকে সম্মান করবেন? ধর্ম প্রবর্তক প্রায় সকলেই তো তার সমাজে প্রচলিত প্রথা, ধর্ম এবং রীতিনীতির সমালোচনা করেছেন, তাদের বেলায়?