আল্লাহর একদিন অর্থ

Print Friendly, PDF & Email

পৃথিবীতে সূর্য যখন ওঠে এবং যখন অস্ত যায়, এই সময়টুকুকে আমরা মানুষেরা সময় গণনার একটি ইউনিট হিসেবে ধরে নিয়েছি। একে আমরা দিন বলি। এরপরে আসে রাত। একটি পুরো দিন এবং একটি পুরো রাত মিলে হয় একটি গোটা দিন। মানে হচ্ছে, এক দিন সময়ের একটি একক। সূর্য উঠা থেকে শুরু করে সূর্য অস্ত যাওয়ার পর থেকে পুনরায় সূর্য উঠা পর্যন্ত সময়কে দিন বলা হয়। তাই দিন পুরোপুরিই নির্ভর করে পৃথিবী এবং পৃথিবীর ঘূর্ণনের গতির ওপর। অন্যান্য গ্রহে দিনের হিসেব হবে ভিন্ন, রাতের হিসেবও। দিনের এই হিসেব নির্ভর করে আপনি কোন গ্রহে অবস্থান করছেন, আপনার গ্রহটির ঘূর্ণন গতি এবং আপনার নিকটবর্তী নক্ষত্র কোনটি তার ওপর। অন্য গ্রহে পৃথিবীর হিসেব অনুসারে দিন একরকম নয়। যেমন,

গ্রহগোটা দিনের দৈর্ঘ্য
বুধ১৪০৮ ঘণ্টা
শুক্র৫৮৩২ ঘণ্টা
পৃথিবী২৪ ঘণ্টা
মঙ্গল২৫ ঘণ্টা
বৃহস্পতি১০ ঘণ্টা
শনি১১ ঘণ্টা
প্লুটো১৭ ঘণ্টা
নেপচুন১৬ ঘণ্টা

কোরআনে বলা হয়েছে, আল্লাহ পাক যেখানে থাকেন সেখানেও দিন রাত্রির হিসেব রয়েছে। তবে সেই দিন পৃথিবীর দিন থেকে অনেক বড় [1] [2]-

তোমার প্রতিপালকের একদিন হল তোমাদের গণনায় এক হাজার বছরের সমান।
— Taisirul Quran
তোমার রবের একদিন তোমাদের গণনায় সহস্র বছরের সমান।
— Sheikh Mujibur Rahman
আর তোমার রবের নিকট নিশ্চয় এক দিন তোমাদের গণনায় হাজার বছরের সমান।
— Rawai Al-bayan
আর নিশ্চয় আপনার রবের কাছে একদিন তোমাদের গণনার হাজার বছরের সমান;
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

তিনি আকাশ হতে পৃথিবী পর্যন্ত কার্য পরিচালনা করেন, অতঃপর সকল বিষয়াদি তাঁরই কাছে একদিন উত্থিত হবে যার পরিমাপ তোমাদের গণনা অনুযায়ী হাজার বছর।
— Taisirul Quran
তিনি আকাশ হতে পৃথিবী পর্যন্ত সমুদয় বিষয় পরিচালনা করেন, অতঃপর একদিন সব কিছুই তাঁর সমীপে সমুত্থিত হবে, যে দিনের পরিমাপ হবে তোমাদের হিসাবে হাজার বছরের সমান।
— Sheikh Mujibur Rahman
তিনি আসমান থেকে যমীন পর্যন্ত সকল কার্য পরিচালনা করেন। তারপর তা একদিন তাঁর কাছেই উঠবে। যেদিনের পরিমাণ হবে তোমাদের গণনায় হাজার বছর।
— Rawai Al-bayan
তিনি আসমান থেকে যমীন পর্যন্ত সমুদয় বিষয় পরিচালনা করেন, তারপর সব কিছুই তাঁর সমীপে উত্থিত হবে এমন এক দিনে যার পরিমাণ হবে তোমাদের গণনা অনুসারে হাজার বছর [১]।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

আরেকটি আয়াতে বলা হয়েছে ফেরেশতা এবং রূহ আল্লাহর দিকে আরোহণ করে এমন এক দিনে, যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছর [3]

ফেরেশতা এবং রূহ (অর্থাৎ জিবরীল) আল্লাহর দিকে আরোহণ করে এমন এক দিনে, যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছর।
— Taisirul Quran
মালাইকা/ফেরেশতা এবং রূহ আল্লাহর দিকে উর্ধ্বগামী হয় এমন একদিনে, যা পার্থিব পঞ্চাশ হাজার বৎসরের সমান।
— Sheikh Mujibur Rahman
ফেরেশতাগণ ও রূহ এমন এক দিনে আল্লাহর পানে ঊর্ধ্বগামী হয়, যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছর।
— Rawai Al-bayan
ফেরেশতা এবং রূহ আল্লাহর দিকে উর্ধ্বগামী হয় [১] এমন এক দিনে, যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছর [২]
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

উপরের আয়াতটি থেকে জানা যায়, আল্লাহ যেখানে থাকেন সেখানেও দিনরাত রয়েছে। যার অর্থ হচ্ছে তিনি কোন গ্রহে বসবাস করেন, সেই গ্রহটিও ঘূর্ণায়মান এবং গ্রহটির নিকটবর্তী একটি নক্ষত্র রয়েছে যা গ্রহটিকে আলো দেয়। নতুবা তার দিনের হিসেব থাকার কথা নয়। আমরা জানি, এক বছরে ৮৭৬০ ঘণ্টা। অর্থাৎ, এক হাজার বছরে ৮৭৬০০০০ ঘণ্টা। অর্থাৎ গ্রহটি নিজ অক্ষের ওপর একবার ঘুরতে এই সময় প্রয়োজন হয়। এরকম গ্রহ আদৌ থাকা সম্ভব কিনা, সেটি একটি প্রশ্ন বটে। সেটিও মেনে নিলে, আল্লাহ পাক যে কোন একটি গ্রহে বসবাস করেন, সেই গ্রহের নিকটবর্তী যে একটি নক্ষত্র রয়েছে, সেটি নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। নইলে সেখানে দিন আসবে কোথা থেকে? দিন থাকলে অবশ্যই সেই গ্রহে অন্তত একটি নিকটবর্তী নক্ষত্র প্রয়োজন, তাই না?

তথ্যসূত্র

  1. কোরআন, সূরা হাজ্ব, আয়াত ৪৭ []
  2. কোরআন, সূরা সাজদা, আয়াত ৫ []
  3. কোরআন, সূরা মাআরিজ, আয়াত ৪ []
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন